বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নামেই জাতীয় সড়ক! কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে শূন্যের বেশি নম্বর জুটবে না ৩৪ নম্বর ওই জাতীয় সড়কের। দীর্ঘ দিন অবহেলা ও উপেক্ষার ফলে বহরমপুরের বুক চিরে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সর্বাঙ্গে ক্ষত। পুজোর মুখে তাপ্পি মারার কাজটুকুও এ বার হয়নি। ফলে সারা বছরের মত পুজোর চার দিনেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, ছড়িয়ে থাকা পাথরের টুকরো, পিচের চাদর উঠে পুকুরে পরিণত হওয়া জমা জলকে সঙ্গী করেই পথ চলতে হবে প্রতিমা দর্শনার্থীদের।
অবিলম্বে জাতীয় সড়ক মেরামতির দাবিতে রবিবার প্রায় দু’ঘণ্টা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন বহরমপুর লাগোয়া চুঁয়াপুরের আর্যপল্লির বাসিন্দারা। বহরমপুরের যুগ্ম বিডিও এবং জমি অধিগ্রহণ দফতরের বিশেষ জেলা আধিকারিক ঘটনাস্থলে পৌঁছান। অবিলম্বে রাস্তা সারাইয়ের আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন। এ দিনের অবরোধের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পুজোর মুখে সমস্যায় পড়তে হয় অসংখ্য মানুষকে। বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের হাল সত্যিই খুব খারাপ। গোটা বিষয়টি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু রাস্তার হাল ফেরানোর ব্যাপারে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক!”
দক্ষিণ ২৪ পরগণার আমডাঙা থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা পর্যন্ত বিস্তৃত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। তার মধ্যে লোকনাথপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার অধীনে। কিন্তু মেহেদিপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ায় সমস্যা নেই। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মুর্শিদাবাদের একটা বড় অংশকে। রাধারঘাট থেকে বহরমপুর পঞ্চাননতলা-চুঁয়াপুর-ভাকড়ি-ভাবতা-বেলডাঙা এলাকায় সড়কের অবশ্য অত্যন্ত খারাপ। গির্জার মোড় থেকে ভাকুড়ি পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও তথৈবচ। রাস্তায় কোথাও কোথাও আড়াই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত গর্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও গত কয়েক মাসে বেড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন মাসে জাতীয় সড়ক লাগোয়া আটটি থানা এলাকায় দু’শোরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮৫ জনের। জখম হয়েছেন আড়াইশো জন।
রাজা বিজয় সিংহ বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক তথা এলাকার বাসিন্দা দীপশঙ্কর সরকার বলেন, “প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। বেহাল জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের পাশাপাশি রোগী নিয়ে যাতায়াতেও অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়।” তিনি জানান, রাস্তা অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকার সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল।
সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে সামিল হয় কংগ্রেস ও সিপিএমও। তবে চুঁয়াপুর মোড়ে আলাদা ভাবে তৃণমূলও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে যে, এটা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি।
রবিবার কৃষ্ণনগরে এক সভায় জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “বিধানসভাতে প্রশ্ন করেছিলাম, জমি দিচ্ছেন না কেন? জমির জন্যই তো রাস্তা চওড়া করা যাচ্ছে না।”
বাস মালিক সংগঠনের পক্ষে তপন অধিকারী বলেন, “এই মুহূর্তে জাতীয় সড়কের যা অবস্থা তাতে সব ক্ষতি সামাল দিয়ে বাস পথে নামানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির মালদা ডিভিশনের প্রকল্পর আধিকারিক মহম্মদ সাইফুল বলেন, “অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy