Advertisement
E-Paper

সম্প্রীতির পুজোয় মাতোয়ারা মুর্শিদাবাদ

শারদসম্মান প্রাপ্তির ‘রণক্ষেত্র’ আর কেবল বহরমপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। জেলাসদর বহরমপ ুর ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে একদা আন্তর্জাতিক খ্যতি সম্পন্ন দুই প্রাচীন শহরে। একদা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ, অর্থাত্‌ লালবাগ ও আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জেও লেগেছে প্রতিযোগিতার রঙ।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বহরমপুরে তোলা গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বহরমপুরে তোলা গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

শারদসম্মান প্রাপ্তির ‘রণক্ষেত্র’ আর কেবল বহরমপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। জেলাসদর বহরমপ ুর ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে একদা আন্তর্জাতিক খ্যতি সম্পন্ন দুই প্রাচীন শহরে। একদা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ, অর্থাত্‌ লালবাগ ও আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জেও লেগেছে প্রতিযোগিতার রঙ। পুজো আয়োজনের লড়াইয়ে বহরমপুরের সঙ্গে পাল্লা সেরার শিরোপা পেতে নিজেদের মধ্যেও ‘গৃহযুদ্ধে’ জড়িয়েছে ওই দুই শহর। লালবাগের কেল্লা নিজামত এলাকায় প্রবেশপথের ঐতিহাসিক দক্ষিণ দরওয়াজার সামনের মুর্শিদাবাদ পুজো সমিতির কথাই ধরা যাক। তাঁদের দাবি, জেলাসদর বহরমপুর কোন ছার, শারদোত্‌সবকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ হেন উজ্জ্বল ইতিহাস ভূভারতে আর দ্বিতীয়টি নেই! দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে পুজো কমিটির সম্পাদক অর্পূব সেনের দাবি, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূর্ত প্রতীক ছিলেন প্রয়াত নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জা। পুজো, ইদ ও বিজয়া সম্মিলনীর জন্য নবাব দক্ষিণ দরওয়াজার সামনের জমিটা রেজিস্ট্রি করে দান করেন। সেই জমিতেই বরাবরের মতো এ বারও পুজো হচ্ছে। আমাদের পুজো কমিটির সহসভাপতিও খোদ নবাবের বর্তমান বংশধর ছোটে নবাব ওরফে জামা নবাব।” শারোত্‌সবের আবহে সম্প্রীতিচর্চার অন্যতম দাবিদার লালবাগের চকবাজার সর্বজনীন দুর্গোত্‌সব কমিটিও। কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিয় চৌধুরী বলেন, “আমাদের পুজো মণ্ডপটাই নবাব পরিবারের প্রয়াত মুন্নি বেগম প্রতিষ্ঠিত চক মসজিদ প্রাঙ্গনে। কমিটিতে সক্রিয় ভাবে রয়েছেন ইরানি মুসলিম সম্প্রদায়ের ও নবাব পরিবারের সদস্যরা। রয়েছেন বাঙালি মুসলিমরাও।”

সম্প্রীতির কৃতিত্বের হকদার লালবাগের ওমরাহগঞ্জ দুর্গোত্‌সব সমিতিও। ওই পুজো কমিটির খোদ সম্পাদকই মুসলিম পরিবারের যুবক আশরাফ হোসেন। তিনি বলেন, “লালবাগে প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার অসাম্প্রদায়িক উত্‌সব বেরা ভাসান অনুষ্ঠিত হয়। এখানেই হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিত ভাবে মহরম পালন করে। ধর্মীয় সংস্কৃতি সমন্বয়ের সেই পথ ধরেই ওমরাহগঞ্জ দুর্গোত্‌সব সমিতির আমিই সম্পাদক।” লিঙ্গ বৈষম্যের যুগে সম্প্রীতির পুজোয় পিছিয়ে নেই সাহানগর-ওমরাহগঞ্জ মহিলা দুর্গাপুজো সমিতি। সমিতির যুগ্ম সম্পাদিকা রানু ভট্টাচার্য ও অমিতা রায় বলেন, “গত ২২ বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মহিলারাই সম্মিলিত ভাবে ওই উত্‌সবের আয়োজন করি। জাহানারা বেগম, ইদি বেগম, জ্যোত্‌স্না বেগমরা ভোগ রান্না, ভোগ বিলি, অঞ্জলি, নবমীর দুপুরের ভুরিভোজ-সহ যাবতীয় কমর্কাণ্ডে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যান।”

সেই মহিলা সমাজেরই দারুণ দুর্দিন এ বার জিয়াগঞ্জের সৌদুগঞ্জ যুবক সংঘের পুজোর থিম। চির প্রতিদ্বন্দ্বী স্টিমারঘাট জলতরঙ্গ ক্লাব এ বার তাঁদের ‘ধারে কাছে ঘেসতে পারবে না’ বলে হুঙ্কার দিয়ে সৌদুগঞ্জ যুবক সংঘের কর্মকর্তা নির্মল দত্ত বলেন, “সতীদাহ রদের চেষ্টা করছেন রামমোহন রায় আর নিজের ছেলের সঙ্গে বিধবার বিয়ে দিচ্ছেন বিদ্যাসাগর-- এ বারের পুজোয় আমরা এটাই ফুটিয়ে তুলেছি। গুহার মধ্যে অসুর বধ করছেন দেবীদুর্গা সেটিও দেখানো হয়েছে।” তৃণমূল নেতা নির্মল দত্তের চির প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান সি পি এমের শঙ্কর মণ্ডল। সেই যুদ্ধং দেহি অবস্থাটা পুরভোট ও পুজোতেই প্রকট হয়। জিয়াগঞ্জ থানা শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য শঙ্করাবু বলেন, “আমাদের পুজো প্রতিদ্বন্দিতায় থাকলে শান্তি কমিটি আয়োজিত পুরস্কার থেকে অন্যরা বঞ্চিত হবে। তাই আমরা স্বেচ্ছায় নিজেদের ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে রেখেছি।”

তবে তাঁর দাবি, “ “ধবধবে সাদা রঙের গোয়ার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রল চার্চের আদলে গড়া হয়েছে ৭৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ। ফাইবার দিয়ে যিশুর জন্ম বৃত্তান্ত, যোশেফ, মেরি, ভ্যালেনটিনা গড়া হয়েছে।” শহর দিয়ে গ্রাম ঘেরার কৌশল নিয়েছে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার নতুনগাম পঞ্চায়েতের আয়েসবাগ গ্রাম। শারোত্‌সবের আকাশে-বাতাসে ইতিমধ্যে রটে গিয়েছে, “এ জেলার সব শহরের সব পুজোকে গুনে গুনে ৭ গোল তো দেবেই দেব আয়েসবাগ!” কোষাধ্যক্ষ দিলীপকুমার মজুমদার জানান, শিল্পী ও পুজো কমিটির একটি দল মাস খানেক মথুরা, বৃন্দাবন ও কাশীধামে গিয়ে পড়েছিল। তীর্থক্ষেত্রের ছবি তুলে, স্কেচ এঁকে নিয়ে এসেছেন। পুকুর ও মাঠ মিলিয়ে ৯ বিঘা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মথুরা, বৃন্দাবন ও কাশীধাম। মথুরার কারাগার, ভাগবত্‌ ভবন, কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির, বৃন্দাবনের রাধাগোবিন্দ মন্দির, সোনার তালগাছ, নিধুবন সবই গড়ে তোলা হয়েছে। ৯৯ ভাগ মিল থাকবেই।” দিলীপবাবু বলেন, “ইচ্ছা থাকলেও অনেকই মথুরা, বৃন্দাবন ও কাশী যেতে পারে না। তাঁদের অপূরিত সাধ পূর্ণ করতে ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি বাজেটের এই পুজো ।

anal abedin murshidabad hindu-muslim integration pujo durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy