Advertisement
E-Paper

হাত নয়, ঘাসফুল নিয়ে চিন্তায় বামেরা

রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল যখন পরস্পরের ভোট কাটাকাটির অঙ্ক কষে জয়-পরাজয়ের হিসেবে ব্যস্ত, তখন মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের উত্থান কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সিপিএমের। বছর খানেক আগেও পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা এলাকায় বামেরা কংগ্রেসের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বাম শিবিরের আশঙ্কা, তৃণমূলের বাড়বাড়ন্ত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের চেয়ে বামেদেরই ক্ষতি করবে বেশি।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০০:০১

রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল যখন পরস্পরের ভোট কাটাকাটির অঙ্ক কষে জয়-পরাজয়ের হিসেবে ব্যস্ত, তখন মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের উত্থান কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সিপিএমের। বছর খানেক আগেও পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা এলাকায় বামেরা কংগ্রেসের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বাম শিবিরের আশঙ্কা, তৃণমূলের বাড়বাড়ন্ত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের চেয়ে বামেদেরই ক্ষতি করবে বেশি।

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ জেলায় সভা করে যাওয়ার পরেই তাই সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, দলের হয়ে সভা করতে আসছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসুরা। জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে একাধিক সভা করবেন তাঁরা।

প্রচারে বাদ পড়েনি শ্মশান বা গোরস্থানের দেওয়ালও।
বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের ছবি।

মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটি লোকসভা কেন্দ্রমুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুর কংগ্রেসের দখলে। রাজনৈতিকভাবে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস বরাবরই বড় শক্তি। কিন্তু গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেরা জেলার ২৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১২টি এবং ২৬টির মধ্যে ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে। জেলা পরিষদের ৭০টি আসনের মধ্যে ২৭টি আসন পেয়েছে বামেরা।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে নদিয়ার করিমপুরকে ধরে কংগ্রেস বামেদের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ৩২ হাজার ভোটে। কংগ্রেস পেয়েছিল ৪ লক্ষ ৮ হাজার ভোট। বাম ভোট ছিল ৪ লক্ষ ৪০ হাজার। ওই এলাকার মধ্যে থাকা মুর্শিদাবাদ (লালবাগ) পুরসভা কংগ্রেসের দখলে এবং জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা বামেদের দখলে। লালবাগ পুর-এলাকায় সর্বশেষ পুর নির্বাচনে কংগ্রেস ৩৩ শতাংশ ও বামেরা ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জিয়াগঞ্জ পুরসভায় বামেরা ৫০ শতাংশ ও কংগ্রেস ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ওই দুই পুর এলাকায় ভোট রয়েছে সাকুল্যে ৬০ হাজার। কাজেই পঞ্চায়েতের ফলের নিরিখে সিপিএম অনেকটাই এগিয়ে। অন্য দিকে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে মাত্র ৫ হাজার ভোটে। কংগ্রেস পেয়েছিল ৩.৪২ লক্ষ ভোট, বামেরা ৩.৩৭ লক্ষ ভোট। কিন্তু এই লোকসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভা, যা প্রায় ৩৫ বছর ধরে বামেদের দখলে। পুরসভায় বামেরা সর্বশেষ নির্বাচনে পেয়েছে ৪৮ শতাংশ ভোট, কংগ্রেস পেয়েছে ৪২ শতাংশ ভোট। ২০১২ সালে জঙ্গিপুরে উপ-নির্বাচনে কংগ্রেসের সেই ভোট পুর এলাকায় কমে অর্ধেকে দাঁড়ায়।

গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু এবারে দুটি কেন্দ্রেই সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গিপুরে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার, মুর্শিদাবাদ লোকসভা এলাকায় ২ লক্ষ ৮ হাজার এবং বহরমপুরে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার, সব মিলিয়ে জেলায় নদিয়ার করিমপুর ধরে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের পর পেরিয়ে গিয়েছে এক বছর। কিছুটা হলেও তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। বাম বিধায়ক চাঁদ মহম্মদ, কংগ্রেসের ইমানি বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কাজেই জেলায় তৃণমূলের ভোট বেড়েছে বলে দাবি জেলা তৃণমূলের।

মৃগাঙ্কবাবুর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোট এক নয়। কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে পঞ্চায়েতে প্রাপ্ত ভোট থেকে দু’টি লোকসভা আসন নিয়ে কিছুটা আশাবাদী আমরা। শাসক দল হিসেবে তৃণমূলের ভোট তো কিছুটা বাড়বেই এবং তৃতীয় শক্তি হিসেবে তারা উঠে আসবে। জেলায় বিজেপি এবার ভোটে সেভাবে ভাগ বসাতে পারবে না। কিন্তু তৃণমূল ডান না বাম ঠিক কাদের শক্তিতে থাবা বসায় তার উপরেই নির্ভর করছে কংগ্রেস ও বামেদের লড়াই। তবে এখনও ভোটের প্রায় একমাস দেরি আছে। বুদ্ধবাবুরা একাধিক সভা করবেন জেলায়। পরিস্থিতি হয়তো অনেকটাই বদলাবে।’’

জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতে ব্যাপক ভিড় সত্ত্বেও জেলা কংগ্রেস অবশ্য জেলায় তৃণমূলকে কোনও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই ধরতে রাজি নয় এখনও। কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের ভোটের সঙ্গে লোকসভা ভোটের অঙ্ক মিলবে না। গুনে দেখুন, জেলার ক’টা পঞ্চায়েত তাদের দখলে। পঞ্চায়েতে কংগ্রেস যেখানে পেয়েছে ২৩১০টি আসন, বামেরা পেয়েছে ২১১৫টি। সেখানে শাসক দলের জোর জুলুমের পরেও তৃণমূলের দখলে মাত্র ৫০৫টি আসন। তাই পঞ্চায়েতের ফলাফলকে সামনে রাখলেও তৃণমূলের সঙ্গে এ জেলার কোথাও কোনও লড়াইয়ের পরিস্থিতি নেই। তৃণমূলের লড়াই জামানত বাঁচানোর জন্য। তিন আসনের সব কটিতেই লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের।”

জেলার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহার অবশ্য সাফ কথা, “কংগ্রেস নেতারা অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন জেলায় তৃণমূলের শক্তি কতটা। এখনও তো সেভাবে প্রচার, সভা শুরুই হয়নি।” তিনি বলেন, “তৃণমূল কারও ভোট কাটার জন্য দাঁড়ায়নি। জেতার জন্য দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে লড়াই সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের। কংগ্রেস থাকবে তৃতীয় স্থানে। সেই কারণেই তৃণমূল বামেদের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

আর মৃগাঙ্কবাবু বলছেন, “পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে লোকসভা ভোটের কিছুটা গুণগত পার্থক্য রয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ঠিক কত ভোট কাটবে এবং তাতে বাম ভোট কতটা প্রভাবিত হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।”

biman hajra raghunathpur tmc cpm loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy