Advertisement
E-Paper

হুমায়ুনের পর কী হবে তৃণমূলের, জল্পনা দিনভর

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর একদা-ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীর যখন তৃণমূলে এসেছিলেন, তখন তাঁকে লম্বা রেসের ঘোড়া বলেই ধরে নিয়েছিল দল। অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক দুর্গে ফাটল ধরাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকেই তুরুপের তাস করেছিলেন। তাই দলছুট হুমায়ুনকে মন্ত্রী করতে কালক্ষেপ করেননি মমতা।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৪

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর একদা-ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীর যখন তৃণমূলে এসেছিলেন, তখন তাঁকে লম্বা রেসের ঘোড়া বলেই ধরে নিয়েছিল দল। অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক দুর্গে ফাটল ধরাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকেই তুরুপের তাস করেছিলেন। তাই দলছুট হুমায়ুনকে মন্ত্রী করতে কালক্ষেপ করেননি মমতা। এমনকী রেজিনগর বিধানসভার উপনির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তাঁকে মন্ত্রীী হিসাবে রেখে দেওয়ার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টার কসুর করেননি। অন্যদিকে, বহরমপুর পুরসভার দু’টি ওয়ার্ডে ঘাসফুল ফুটিয়ে ও বাকি আসনগুলিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে হুমায়ুনও দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, মুখ্যমন্ত্রীও তখন ভুল ঘোড়ায় বাজি ধরেননি।

সেই হুমায়ুনকেই বৃহস্পতিবার দল থেকে ছেঁটে ফেলা হল। এটা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর জেলায় দলীয় পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের বিরুদ্ধে যে ভাবে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন হুমায়ুন, তাতে দল শৃঙ্খলারক্ষার স্বার্থে তাঁকে প্রথমে সাসপেন্ড, পরে ছাঁটাই করবে, এমনই আন্দাজ করছিল রাজনৈতিক মহল। তবে এতে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের উপর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে এদিন চলেছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ।

তৃণমূলের ঘর ভাঙায় বিরোধীরা স্বভাবতই খুশি। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “তৃণমূল দল ও তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ ও প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের মতো পরিণতি হচ্ছে। এটাই তৃণমূলের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।” সত্যবাদিতার জন্য হুমায়ুনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ধারণা, হুমায়নকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তৃণমূলের অবস্থা আরও করুণ হবে।

এ কথা মানতে নারাজ লালগোলা ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জাহাঙ্গির মিঞা। তিনি বলেন, “হুমায়ুন কবীরকে দেখে কেউ তৃণমূল করেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য করেন। হুমায়ুনের জন্য দলের ভিতরে কোনও রকম প্রভাব ফেলবে না।”

১৯৯৮ থেকে ২০০৮, টানা ১৫ বছর বহরমপুর পুরসভা ছিল বিরোধীশূন্য। ওই ১৫ বছর তিন তিনবার পুরভোটে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুরে প্রচার করেও দলীয় প্রাথীদের জামানত রক্ষা করতে পারেননি। ২০১৩ সালের পুরভোটের প্রচারে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ শহরে পা রাখেননি। তার বদলে বহরমপুর শহরকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে তৎকালীন মন্ত্রী সুব্রত সাহা, দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি, কার্যকরী জেলা সভাপতি হুমায়ুন কবীর ও যুব তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতি উৎপল পালকে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হুমায়ুনের দায়িত্বে ছিল ৩ নম্বর থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত মোট ৫টি ওয়ার্ড। অন্য নেতাদের জোন থেকে জেতা দূরের কথা, কংগ্রেসের প্রার্থীদের সঙ্গে ঠিক মতো লড়াইটাই দিতে পারেননি তৃণমূলের প্রার্থীরা। কিন্তু হুমায়ুন ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কানাই রায়, এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রদীপ নন্দীকে জিতিয়ে এনেছিলেন।

ফলে হুমায়ুন দল ছাড়ায় দোটানায় কানাই রায় ও প্রদীপ নন্দীর। কোনও প্রতিক্রিয়া দিতেই নারাজ তৃণমূলের বহরমপুর টাউন সভাপতি কানাই রায়। অপর দিকে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি প্রদীপ নন্দী বলেন, “দলের অন্যদের সমালোচনা করা এক, আর দলনেত্রীর সমালোচনা করা অন্য ব্যাপার। মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সমালোচনা করায় আমাদের খারাপ লেগেছে। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে।”

গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫৮ নম্বর রেজিনগর কেন্দ্র থেকে জিতেছেন কংগ্রেসের প্রার্থী শাহনাজ বেগম। হুমায়ুন ওই কেন্দ্রের ভোটার। তাঁর বাড়িও ওই কেন্দ্রে। ভোটের আগের রাতে ও ২০১৩ সালের ডিসম্বরে হুমায়ুনের হাতে শাহনাজ আক্রান্ত হয়েছেন বলে দু’টি মামলা চলছে আদালতে। শাহনাজ বলেন, “মারকুটে স্বভাবের কারণে আমজনতার কাছে হুমায়নের ভাবমূর্তি ভাল নয়। তাঁর উপর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের ক্ষতি-বৃদ্ধি নির্ভর করে না।”

humayun kabir tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy