Advertisement
E-Paper

পড়শিদের হেরোইন-খিদে মেটাচ্ছেন বাংলার বাহকেরা! মণিপুরী মাদক আসা বন্ধ হতেই নতুন ‘চালে’ কারবার

পুলিশ সূত্রেই খবর, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অন্তর্গত পলাশিপাড়া থানার বড় নলদহ থেকে গত সোমবার ৩৩ কেজি হেরোইন তৈরির কাঁচামাল ও ৪০০ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৫
Share
Save

উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে গাঁজা, হেরোইন এনে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার ‘বাজারে’ পৌঁছে দেওয়াই কাজ ছিল তাঁদের। যখন পুরোদমে এই কারবার চলত, কাঁচা টাকার ফোয়ারা হত! কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মণিপূরে গোষ্ঠী-অশান্তির জেরে প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে মাদক আমদানি। রুজিরুটিতে টান পড়ায় সেই ‘ক্যারিয়ারেরাই’ (মাদক বাহক) কারিগর হয়ে উঠেছেন এখন। নিজের নিজের এলাকাতেই গুমটি খুলে হেরোইনের কারখানা খুলে ফেলেছেন তাঁরা। সম্প্রতি এ রকমই কিছু কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর মাদক উদ্ধার ও ধৃত ‘কারবারি’দের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তেমনটাই মনে করছেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার তদন্তকারীদের একাংশ।

পুলিশ সূত্রেই খবর, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অন্তর্গত পলাশিপাড়া থানার বড় নলদহ থেকে গত সোমবার ৩৩ কেজি হেরোইন তৈরির কাঁচামাল ও ৪০০ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয় দুই যুবক— এনামুল কোভিদ ও আব্দুল আজিজকে। অভিযোগ, গ্রাম থেকে একটু দূরে লোকচক্ষুর আড়ালে একটি কালভার্টের নীচে হেরোইন তৈরি করতেন দু’জন। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ধৃতদের বিরুদ্ধে মাদক বাহক হিসাবে কাজ করার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ নিয়ে গত তিন মাসে পুলিশ জেলা ও এসটিএফের হাতে মোট সাত জন গ্রেফতার হয়েছেন। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের হেরোইনের কাঁচামালও উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি।

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার এস অমরনাথ বলেন, ‘‘হেরোইন তৈরির খবর গোপন সূত্রে পেয়েই অভিযান চালানো হয়। প্রচুর কাঁচামাল মিলেছে। এদের বিরুদ্ধে আগেও মাদক পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। আমাদের আশঙ্কা, এরা আগে ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ করত। পুলিশের তৎপরতা ও লাগাতার তল্লাশি অভিযানে সেই ব্যবসা মাথায় উঠেছে। তাই এখন নিজেরাই হেরোইন তৈরি করতে শুরু করেছে। সবটাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ যদিও আদালতে হাজির করানোর সময় এই দাবি নস্যাৎ করেছেন এনামুল এবং আব্দুল। তাঁদের দাবি, নেহাতই কৌতূহলবশত হেরোইন তৈরি করছিলেন তাঁরা। এনামুল বলেছেন, ‘‘কোনও দিন হেরোইন তৈরি করিনি। পাচার তো অনেক দূরের ব্যাপার। একটু উৎসাহ আছে এ ব্যাপারে। তাই হেরোইন তৈরি করছিলাম আমরা।’’

নদিয়ার কালীগঞ্জের ছোট নলদহ, বড় নলদহ, সাহেবনগর বরাবরই মাদক কারবারিদের ‘মুক্তাঞ্চল’ বলে পরিচিত জেলায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে রেল ও সড়ক পথে বিভিন্ন ‘পয়েন্ট’ ধরে মাদক এসে পৌঁছত মালদহ ও মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায়। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ত নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায়। আবার মণিপুর থেকে সরাসরি নবদ্বীপ হয়েও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, মধ্যমগ্রাম এবং কলকাতায় পৌঁছে যেত মাদক। কিন্তু সম্প্রতি মণিপুর অশান্ত হয়ে ওঠায় সেই কারবারে এখন ভাটা পড়েছে। তার উপর এসটিএফ আর পুলিশের লাগাতার যৌথ অভিযান! গত দু’মাসে গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বহু কারবারি। পুলিশি তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকার মণিপুরী মাদক। গ্রেফতারও হয়েছেন জনা ছয়েক।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, কারবারের বিঘ্ন ঘটায় ঘুরপথেও মাদক ঢুকছিল বাংলায়। পুলিশের ঝক্কি এড়াতে ওড়িশার কলিঙ্গ থেকে মেদিনীপুর হয়ে গাঁজার আমদানি হচ্ছিল। কলিঙ্গ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন রাজ্য। তারই কিছুটা অংশ এখন ওড়িশার মধ্যে পড়ে। গোদাবরী ও মহানদীর মধ্যবর্তী এই উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রাচীন কালে মশলার আসত বঙ্গদেশে। মাঝে সেখান থেকে মাদক আসাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় তা-ও মাথায় উঠেছে! এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা ক্যারিয়ারের কাজ করছিলেন, বাংলা তো বটেই, পড়শি দুই রাজ্যের চাহিদা মেটাতে নিজেরাই হেরোইন বানাতে শুরু করেছেন। নলদহের আনোয়ার শেখের কথায়, ‘‘মাঝে বেশ কিছু দিন কারবার বন্ধ ছিল। আমরা এলাকার লোকেরা এগুলো বুঝতে পারি। অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল। এখন আবার ওদের মাঝেমধ্যে পাড়ায় দেখা যায়। কয়েক দিন ধরে আনাগোনাও বেড়েছে।’’

মাদকের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে পলাশিপাড়ার নানা জায়গায় বিক্ষোভও হয়েছে। মাদকবিরোধী মঞ্চের সদস্য আনসার আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে যারা মাদকের হাত বদলের ব্যবসা করত, এখন ওরাই কারিগর হয়ে উঠেছে। কাঁচা টাকার হাতছানি এদেরকে অপরাধ জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা আটকাতে না পারলে গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যাবে!’’ পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়দের একাংশ। নলদহের এক বধূর কথায়, ‘‘পুলিশ কিছু জানে না, এটা হতে পারে? পুলিশের কাছে বখরা ঠিকঠাক পৌঁছে দিলে আর কোনও অসুবিধা নেই। উল্টোটা হলেই এই চোর-পুলিশ খেলা শুরু হয়।’’

পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জেলার এক কর্তার কথায়, ‘‘পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়। কিছু দিন আগেই এই বড় নলদহ গ্রাম থেকে তিন কেজি হেরোইন উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বছরও কয়েক কোটি টাকার হেরোইন-সহ বেশ কয়েক জনকে পাকড়াও করা হয়েছে। মাদক পাচার রুখতে জেলা পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়।’’

Heroin Drug

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।