Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবাদ যেন শান্তিপূর্ণ হয়, গাঁধী-পথের বার্তা নাখোদার

নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলুক, তবে তা যেন শান্তিপূর্ণ হয়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছেই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ইতিহাসের সেই পথকে আঁকড়ে থাকছেন নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলুক, তবে তা যেন শান্তিপূর্ণ হয়। এ ক্ষেত্রে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর আদর্শকেই সামনে রাখতে চাইছেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার নমাজের পরে মসজিদে জমায়েতের উদ্দেশে শান্তি বজায় রাখা এবং শান্তির বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

অতীতে নাখোদা মসজিদ তৈরি ও পরবর্তীকালে তার সংস্কারের পিছনে গুজরাতের কচ্ছের মেমন সম্প্রদায়ের যে পরিবারগুলির সর্বাধিক অবদান রয়েছে, সেই পরিবারেরই এক উত্তরসূরির কথায়, ‘‘কোনও আইন আমার পছন্দ না-ই হতে পারে। সে জন্য আন্দোলনের পথ তো রয়েছেই। কিন্তু সেই আন্দোলন যেন শান্তিপূর্ণ হয়। মহাত্মা গাঁধীও আইন অমান্য আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু তার ভিতটা ছিল শান্তিপূর্ণ। কোনও রাজ্য, কোনও শহরেই শান্তি বিঘ্নিত করে প্রতিবাদ হোক, সেটা আমরা চাই না। এই বার্তাটা খুব স্পষ্ট ভাবে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’’ মসজিদের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মহম্মদ কাসিম বলেন, ‘‘কোনও পক্ষই যেন ভুলে না যাই যে, সবার উপরে ভারতীয় সংবিধান রয়েছে। সংবিধানের মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না-হয়, সেটা সকলেরই দেখা দরকার।’’

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরেও শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন নাখোদার তৎকালীন ইমাম শেখ মহম্মদ সাবির। মসজিদ সূত্রের খবর, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। শান্তিরক্ষার বার্তা ছড়ানোর জন্য সরকারের তরফে অনুরোধ করা হয়েছিল তাঁদের।

আরও পড়ুন: শান্তির পথে আন্দোলন হোক, চান বিশিষ্টরা

১৯২৬-এ তৈরি নাখোদা মসজিদ কলকাতার সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সাদা মার্বলের দেওয়াল, বেলজিয়াম কাচ, বিশাল নমাজ পড়ার জায়গা, দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো কাঠের ঘড়ি— সব মিলিয়ে ছত্রে-ছত্রে ইতিহাস। কিন্তু ১৯২৬ সালের আগেও নাখোদা মসজিদের একটা ইতিহাস ছিল। বর্তমানে যেখানে নাখোদা মসজিদ রয়েছে, সেখানে দু’টি ছোট মসজিদ ছিল। কচ্ছের মেমন সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষই সেই দু’টি মসজিদকে একত্র করে নাখোদা মসজিদের বর্তমান কাঠামো নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবের প্রতিবাদে রাখিবন্ধনের জন্য নাখোদার পুরনো কাঠামোয় গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— এমনটাই শোনা যায় বলে জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ধর্ম নির্বিশেষে সকলকেই রাখি পরাতে চেয়েছিলেন। তাঁর কাছে রাখিবন্ধনের অর্থ ছিল সমস্ত রকম বিভেদ-বিভাজনের ঊর্ধ্বে ওঠা একটি আদর্শ। শান্তিনিকেতনে রাখির কোন রূপ তাঁর কল্পনায় ছিল, তার নমুনা চিঠিপত্র থেকে পাওয়া যায়।’’

বর্তমানে তেমনই এক অদৃশ্য রাখি, যা সমস্ত বিভেদ-বিভাজন মুছে দিতে পারবে, তারই খোঁজ করছেন নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষও! যার সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে গাঁধী! মিশে যাচ্ছে শান্তি-সম্প্রীতির পরম্পরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nakhoda Mosque Citizenship Amendment Act CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE