Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Whatsapp

সংক্রমিতদের নাম ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে, উঠছে প্রশ্ন 

পরিষেবার স্বার্থে যে তথ্য শুধু বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাছে থাকার কথা, তা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যাওয়ায় প্রমাদ গুনছেন অনেকে।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

প্রকাশ পাল 
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৭
Share: Save:

তিনি এক জন কোভিড-যোদ্ধা। করোনাতেই আক্রান্ত হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর ঘুরছে হোয়াটস্‌অ্যাপে!

অবশ্য শুধু শ্রীরামপুরের মাহেশের বাসিন্দা, কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্যই নয়, হুগলির শতাধিক সংক্রমিতের যাবতীয় তথ্যও চলে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরিষেবার স্বার্থে যে তথ্য শুধু বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাছে থাকার কথা, তা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যাওয়ায় প্রমাদ গুনছেন অনেকে। এতে সংক্রমিত এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন সমস্যায় পড়তে পারেন বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

মাহেশের ওই সংক্রমিত মহিলার পরিবার ইতিমধ্যেই বিড়ম্বনায় পড়েছে। বাড়িতে তাঁর প্রায় ৯০ বছর বয়সী মা এবং বয়স্ক তিন দিদি নিভৃতবাসে রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বিরূপ আচরণ করছেন। পাড়ারই কিছু লোক জেলার শতাধিক সংক্রমিতের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়েছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। সংক্রমিত মহিলার এক ভাইঝি বলেন, ‘‘তালিকায় ছোট পিসির নাম থাকায় অনেকে ওই বাড়িকে নিশানা করছেন। করোনা-করোনা বলে চিৎকার, হাসাহাসি করছেন। যেন রসিকতা ও মুখরোচক চর্চার বিষয়! কানাঘুষো শুনছি, পিসি হাসপাতাল থেকে ফিরলে পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য কী ভাবে সাধারণ মানুষের হাতে যায়?’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, ফের মৃত্যু ডাক্তারের

গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছে ওই পরিবার। যারা ওই তথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই তথ্য সাধারণ মানুষের হাতে যাওয়া কাম্য নয়। আমরা খতিয়ে দেখে সেইমতো পদক্ষেপ করব।’’

বৃহস্পতিবার রাতে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে সমস্যার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। পুলিশ বাড়িতে যায়। বাড়ির সামনে ট্যাপকলের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুরসভার তরফে সেটি খুলে দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক নিজে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। খাদ্যসামগ্রী, পালস অক্সিমিটার তুলে দেন। নিজের এবং টেলি-মেডিসিনের চিকিৎসকের ফোন নম্বর দেন। আশ্বাস দেন, প্রশাসনের তরফে প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া হবে। তাঁরাও যে কোনও সমস্যায় ফোন করতে পারেন।

প্রশাসনের আশ্বাসে ওই পরিবার আশ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু সংক্রমিতদের তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এল কী ভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা, আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, ‘‘কোভিডের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখাই শ্রেয়। যারা ওই তথ্য ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মামলা করা উচিত।’’ মাহেশেরই বাসিন্দা, কলেজ-শিক্ষিকা সঞ্চারী গোস্বামী বলেন, ‘‘তথ্য ছড়াল কিনা, তার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মানুষকে এটা বোঝানো যে, কাউকে অচ্ছুৎ ভাবা ঠিক নয়। বরং সাবধানতা অবলম্বন করে পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রশাসনকেই এটা বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Whatsapp Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE