নিজস্ব চিত্র।
কোভিড বিধি মেনে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে গ্রেফতার করা হয়নি। ২০টিরও বেশি গাড়ি নিয়ে গিয়ে সিবিআই তাঁকে তুলে নিয়ে আসে। কোভিড থেকে সদ্য উঠে আসা একজনের সঙ্গে কি এই আচরণ করা যায়? বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে নারদ মামলার শুনানিতে এই প্রশ্নই তোলেন মদনের আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা। এমনকি বিশেষ আদালতের দেওয়া জামিনের রায়ের পক্ষেই তিনি জোরালো সওয়াল করেন।
বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে শুনানির শুরুতেই সওয়াল করেন লুথরা। তাঁর মক্কেল-সহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সাংবিধানিক নিয়মের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। সিবিআই সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। অথচ গ্রেফতারি মেমোতে সময় দেখিয়েছে ৮টা ৪৫ মিনিট। এটা কি গ্রেফতারির সংজ্ঞা হতে পারে? তারপরেও তারা নীতি-নৈতিকতার কথা বলবে?” এই দাবির পরে লুথরাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। তিনি বলেন, “যদি ধরেও নিই ওই দিনের গ্রেফতারি অবৈধ ছিল, তারপরেও কি জামিনের অধিকার অর্জন করা যায়?” পাশাপাশি গ্রেফতারের বৈধতা এই মামলার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সৌমেন সেন।
অন্য দিকে, নিম্ন আদালতের বিচারক প্রভাবিত হয়ে রায় দিয়েছিলেন, এই দাবি তুলে গত সপ্তাহে সওয়াল করেছিলেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি তুষার মেহতা। বৃহস্পতিবার ওই দাবির বিরোধিতা করে লুথরা বলেন, "বিচারপতিরা সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করার শপথ নেন। তাঁরা মানুষের ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হন না। বিচারকরা যে শপথ নেন তা হল পবিত্র। যদি সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্যকে স্বীকার মেনে নিই, তবে বিচারপতিরা যে শপথ বাক্য পাঠ করেছেন সেটা একটা কাগজ ছাড়া আর কিছু নয়।” তাঁর এই মন্তব্যের পরে বেঞ্চের বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন “তাঁর এই যুক্তির ধারণা কী?” উত্তরে মেহতা বলেন, “অভিযুক্তরা জামিন পেয়েছেন। সিবিআই দেখল মামলাটি এখন তাদের অনুকূলে যাচ্ছে না, তাই অন্যত্র সরাতে চাইছে। তারা যুক্তি দিচ্ছে, ঘেরাও-বিক্ষোভের ফলে বিচারকের উপর প্রভাব পড়েছে। সাধারণ বুদ্ধি বলে আদালতে দিনে ৪০-৫০টি মামলার শুনানি হয়। তবে আমরা কি সত্যিই মনে করব জনরোষের প্রভাব সব মামলায় পড়েছে?” এই যুক্তির পরেই বিচারক ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিচারককে অব্যর্থ হিসাবে দেখা যায় না। তাঁরা মানুষ, কম্পিউটার নন। তাঁর চারপাশের অবস্থা এমন হওয়া উচিত নয়, যার কারণে তিনি তাঁর শপথ রাখতে পারবেন না হন। এটাই সিবিআইয়ের পক্ষ বলছে।” বৃহস্পতিবার লুথরার সওয়াল হয়েই শুনানি শেষ হয়। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy