E-Paper

প্রতিদিনের শুনানি তথ্যের অডিট হবে সেই দিনই

কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোনও ভোটারকে শুনানিতে ডাকা হবে, সফটওয়্যারে তা দাখিল করার কাজ চলছে। তার ভিত্তিতেই ‘সিস্টেম’ থেকে ভোটারদের শুনানির নোটিস জারি হবে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২৮
জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

শুনানি-তথ্যের ‘অডিট’ করানোর সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। যে নথি বা শুনানির ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) বা এইআরও-রা কোনও ভোটারকে যোগ্য বা অযোগ্য বলে চিহ্নিত করবেন, সেটি কতটা যথাযথ তা-ই খতিয়ে দেখা হবে এই ‘অডিটের’ মাধ্যমে। এতে যেমন দাখিল হওয়া নথির যাচাই হবে, তেমনই সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী আধিকারিক যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন কি না, তা বুঝতে পারবে কমিশন। স্থির হয়েছে, প্রতিদিনের শুনানি-তথ্যের ‘অডিট’ হবে সেদিনই। আধিকারিকদের মতে, এতে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের প্রয়োগ কমিশনের পক্ষে করা অনেক বেশি সহজ। বিহারেও শুনানির ব্যবস্থা ছিল। তবে এমন অডিটের দরকার সেখানে হয়নি। যে পর্যবেক্ষকেরা কাজ করছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা, সুপারিশ, রিপোর্ট এবং পরিস্থিতির মূল্যায়নের উপর পদ্ধতির ধরন বদলাচ্ছে জায়গাবিশেষে।

কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোনও ভোটারকে শুনানিতে ডাকা হবে, সফটওয়্যারে তা দাখিল করার কাজ চলছে। তার ভিত্তিতেই ‘সিস্টেম’ থেকে ভোটারদের শুনানির নোটিস জারি হবে। বিএলও-রা তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেবেন। হাতে কিছুদিন সময় রেখে শুনানির দিনক্ষণ সেই ভোটারের জন্য নির্দিষ্ট থাকার কথা। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে, দৈনিক একশো জন করে ভোটারের শুনানি করবেন ইআরও-এইআরও-রা। শুনানির দু’টি পর্যায় রয়েছে। এক, নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করা হবে ভোটারকে এবং তিনি কমিশনের তালিকাভুক্ত নথিগুলির মধ্যে একটি দাখিল করবেন। সেই নথি কমিশনের সফটওয়্যারে জমা হবে। দুই, সে সব দেখে ইআরও বা এইআরও সিদ্ধান্ত নেবেন সেই ব্যক্তি যোগ্য ভোটার কি না। তবে কোন যুক্তিতে তিনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা নথিবদ্ধ করতে হবে কমিশনের সফটওয়্যারেই। তাকেই পোশাকি ভাষায় বলা হচ্ছে ‘অর্ডার শিট’। অডিটে প্রতিদিন জমা পড়া সেই নথি এবং অর্ডার-শিট সে দিনই যাচাই করবে কমিশন। নথির বৈধতার সঙ্গে দেখা হবে, দাখিল করা নথি এবং ‘অর্ডার শিটে’ আধিকারিকের দেওয়া যুক্তির মধ্যে মিল রয়েছে কি না। মিল না থাকলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে সেই আধিকারিককেই। তাই প্রতিটি শুনানি-কেন্দ্রে মাইক্রো অবজ়ারভার নিয়োগের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে এখন।

কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত?

কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, ক্লোজ়়ড সার্কিট ক্যামেরার সামনে শুনানি এবং সেই পর্বের ভিডিয়ো রেকর্ড করে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা এখনও কমিশনের বিবেচনাধীন। আইনের দিক থেকে এই পদক্ষেপ কতটা যথাযথ, তা নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া চলছে। কারণ, বিষয়টিতে ব্যক্তি-বক্তব্যের গোপনীয়তাও যুক্ত রয়েছে। তবে নথি বা আধিকারিকদের সিদ্ধান্ত যাচাই করা কমিশনের সরাসরি আইনি এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে। সেই কারণে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত মঙ্গলবারই কমিশন লিখিত ভাবে জানিয়েছিল, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৩৭ ধারা অনুযায়ী, ভুয়ো নথি বা তথ্য দাখিল করলে আইনি সাজার মুখোমুখি হতে হবে। তাতে সর্বাধিক সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে অভিযুক্তের ইচ্ছাকৃত দোষ প্রমাণ হলে। এমনকি, ভোটার-আধার কার্ড, যে কোনও শংসাপত্র, আদালত-সরকারি নথি ইত্যাদি জাল করলেও এই সাজা হতে পারে। প্রসঙ্গত, এখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শংসাপত্র নেওয়ার চাহিদা বাড়ছে। রাজ্য সরকারও নথি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এর সুযোগে অসাধু উপায় কাজে লাগানো ঠেকাতেই এই হুঁশিয়ারি।

প্রসঙ্গত, প্রায় ১.৬৭ কোটি ভোটারের নথিতে গরমিল-তথ্য চিহ্নিত করেছে কমিশন। তার মধ্যে ২০০২ সালের এসআইআর এবং এখনকার এনুমারেশন নথিতে বাবার নামের মিল নেই অন্তত ৮৫ লক্ষ ভোটারের। আবার বহু ব্যক্তির মা-বাবার নাম-তথ্য একই রয়েছে—এই সংখ্যাটা প্রায় ২৪ লক্ষ। বাকি সব নথি রয়েছে মা-বাবা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার সঙ্গে ভোটারের অবাস্তব বয়সের ফারাক ইত্যাদি ভুল-ত্রুটি নিয়ে। সব মিলিয়ে তাই পর্যবেক্ষকদের উপর বাড়তি দায়িত্ব থাকবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India Audit

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy