Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সনাতনের শাস্তি চাইল নিহতের মা

বুধবার পুরুলিয়া আদালত চত্বরে ওই মহিলা দাবি করে, ‘‘‘আমি নির্দোষ। আমার বাচ্চাকে সনাতনই মেরেছে। আমি ওর শাস্তি চাই।’’

আদালতে: সুচ-কাণ্ডে অভিযুক্ত সনাতন। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

আদালতে: সুচ-কাণ্ডে অভিযুক্ত সনাতন। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৪
Share: Save:

তার শিশু কন্যাকে মারার জন্য নিজের দ্বিতীয় পক্ষের স্বামীকেই দায়ি করল নিহত শিশুর মা। বুধবার পুরুলিয়া আদালত চত্বরে ওই মহিলা দাবি করে, ‘‘‘আমি নির্দোষ। আমার বাচ্চাকে সনাতনই মেরেছে। আমি ওর শাস্তি চাই।’’

সাড়ে তিন মাসের সৎ মেয়ের শরীরে একের পর এক সাতটি সুচ ঢুকিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার নদিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড সনাতন গোস্বামী (ঠাকুর) ধরা পড়ার পরেই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে তার কঠিন শাস্তির দাবি উঠেছিল। ওই খুনে জড়িত অভিযোগে ধৃত শিশুটির মা তথা সনাতনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী অবশ্য এতদিন প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিল। এ দিন কিন্তু মামলার বিচার শুরুর প্রথম দিনে সেই মা মুখ খুলল। সাংবাদিকদের সামনে সে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করল। সেই সঙ্গে মেয়ের খুনের জন্য সনাতনকে দায়ী করে তার শাস্তি চাইল। তাহলে এত দিন চুপ করেছিল কেন? নিহত শিশুর মায়ের দাবি, ‘‘আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না।’’ এ দিকে, সনাতন এ দিনও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে।

যদিও দুই অভিযুক্তের নিজেদের নির্দোষ বলার দাবি মানতে নারাজ তদন্তকারীরা। ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে এই মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার পরে পুলিশ দাবি করেছিল, দু’জনকে জেরা করে তারা জানতে পেরেছে, সনাতন শিশুটিকে মেরে ফেলতে চাওয়ায় বাচ্চাটির মা আপত্তি তোলেনি। কারণ তাতে সনাতনের কাছে তার আশ্রয় চলে যাওয়ার ভয় ছিল। অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড জানত, হঠাৎ করে মেয়েটিকে খুন করলে ময়না-তদন্ত, থানা-পুলিশ হতো। তাই দিনের পর দিন শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সুচ ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে মেয়েটিকে নিস্তেজ করতে চেয়েছিল সে। সবই জানতে শিশুটির মা।

২৬ অক্টোবর এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা অর্থাৎ হত্যা, ১২০ (বি) অর্থাৎ ষড়যন্ত্র ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সনাতনের বিরুদ্ধে ৩৭৬ এবং পকসো ৬ ধারায় চার্জ গঠন হয়েছে। শিশুটির মায়ের বিরুদ্ধে ২০১ পকসো ১৮ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।

এ দিন পুরুলিয়া জেলা আদালতে অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সুযশা মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল। ওই ঘটনায় পুলিশের কাছে তখন অভিযোগ জানিয়েছিলেন জেলা চাইল্ড লাইনের তৎকালীন কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বিচারককে সব জানিয়েছি।’’

সরকার পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার আলি আনসারি জানান, এই মামলায় চল্লিশ জনের বেশি সাক্ষী রয়েছেন। প্রথম পর্বে মোট আট জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। বাকিদের পরের পর্বে ডাকা হবে।

গত ১১ জুলাই জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে ওই শিশুকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা করতে গিয়ে শিশুটির শরীরের একাধিক স্থানে অস্বাভাবিক ক্ষতচিহ্ন দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। শিশুর মায়ের কাছে এ নিয়ে সদুত্তর না পেয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন। এক্স-রে করতে ধরা পড়ে শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সাতটি সুচ ফুটে রয়েছে। তা বের করতে ১৪ জুলাই শিশুটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। অস্ত্রোপচার জটিল বলে পরের দিনই তাকে কলকাতার এসএসকেএমে পাঠানো হয়। ১৮ জুলাই সেখানে শিশুটির অস্ত্রোপচার করে সাতটি সুচ বের করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ২১ জুলাই শিশুটির মৃত্যু হয়। পরের দিন জিজ্ঞাসাবাদের পরে শিশুটির মাকে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করে। ২৯ জুলাই উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র জেলার পিপিড় থানা এলাকার রেণুকোটের একটি হনুমান মন্দির থেকে মেয়েটির সৎবাবা সনাতনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, সনাতন বাইরে বার বার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও, সে জেরায় ইতিপূর্বেই স্বীকার করেছে, দু’জনের দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর প্রথম পক্ষের ওই শিশুটি বাধা হয়ে উঠেছিল। সে কারণে তাকে ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলতেই পরিকল্পনা করে সুচ বিঁধিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল সে।

এ দিন দুপুরে কড়া পুলিশ পাহারায় দুই ধৃতকে এজলাসে নিয়ে আসে পুলিশ। তারপরে এজলাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanatan Goswami Needle Murder Punishment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE