Advertisement
E-Paper

স্কুলশিক্ষকদের ইনাম-তর্জনের প্রস্তাবে বিতর্ক

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডাকা স্কুলশিক্ষা নিয়ে রাজ্য উপদেষ্টা বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান অরুণ চট্টোপাধ্যায় পাশ-ফেল বৈঠকে শুধু এই প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত হননি।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭

বৈঠকটা ডাকা হয়েছিল প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মতামত বিনিময়ের জন্য। সেই আলোচনার মধ্যেই প্রস্তাব এল, পাশ-ফেল ফেরানোর আগে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য চালু করা হোক পুরস্কার-তিরস্কারের প্রথা।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডাকা স্কুলশিক্ষা নিয়ে রাজ্য উপদেষ্টা বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান অরুণ চট্টোপাধ্যায় পাশ-ফেল বৈঠকে শুধু এই প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত হননি। সেই সঙ্গে বলেছেন, স্কুলের পঠনপাঠন যথাযথ হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে স্কুল পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক।

স্কুলশিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদের কর্তার এই সব প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক আনুগত্য বিচার করে পুরস্কার-তিরস্কার প্রথার অপপ্রয়োগের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন শিক্ষা শিবিরের অনেকে।

কিন্তু অরুণবাবু মনে করেন, পাশ-ফেলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের মান বিচারের আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মান যাচাইয়ের বন্দোবস্ত দরকার। পাশ-ফেল ফেরানোর আগে কী কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, শিক্ষামন্ত্রীর ওই বৈঠকে লিখিত ভাবেই তা জানিয়েছেন অরুণবাবু। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়া আগে শিখবে। তার পরে তো আসবে পাশ-ফেলের প্রশ্ন। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই মন দিয়ে পড়াচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দক্ষতা বিচারের জন্য পুরস্কার এবং তিরস্কার প্রথা চালু করা প্রয়োজন।’’ তিনি মনে করেন, ইনাম-তর্জনের ব্যবস্থা হলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়বদ্ধতা বাড়বে। সেই সঙ্গে স্কুলে যথাযথ পঠনপাঠনের ধারা নিশ্চিত করা যাবে। নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নের উপরে জোর দিয়েছেন অরুণবাবু।

ওই বৈঠকে প্রাথমিকের পাঠ্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ‘আমার বই’ ওজনে বেশ ভারী। পড়ুয়াদের বইটি খুলে পড়তে অসুবিধা হয়। সেই সঙ্গে প্রাথমিকের পাঠ্যক্রমের মানও বেশ ওজনদার। ওই বৈঠকেই রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারকে এই সব বিষয় দেখার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু।

পরিদর্শনের দায়িত্ব প্রাক্তন শিক্ষকদের দেওয়া কেন প্রয়োজন, তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন অরুণবাবু। স্কুলে যথাযথ পঠনপাঠন হচ্ছে কি না, সে-দিকে নজর দেওয়ার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, স্কুল পরিদর্শন করেই বর্তমান পরিদর্শকদের কাজ শেষ হয় না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশন, ছুটি-সহ সব কিছুই দেখতে হয় তাঁদের। ফলে অন্যান্য কাজের চাপে মার খায় পাঠ-পরিবেশ পরিদর্শনের মূল কাজ। সে-ক্ষেত্রে যদি অভিজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরিদর্শনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা সেই কাজটি মন দিয়ে করতে পারেন।

অরুণবাবুর সব প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না শিক্ষকদের একাংশ। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টচার্য। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের কতটা পড়াতে পারছেন, সেটাই শিক্ষকদের আসল পুরস্কার। নতুন করে পুরস্কার-তিরস্কার প্রথা চালু করার প্রয়োজন আমরা দেখি না।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে স্কুল পরিদর্শন করালে সেটা হবে এক রকম তাঁদের ডেকে এনে অসম্মান করা। প্রায় একই সুরে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানান, পুরস্কার-তিরস্কার প্রথা গলদমুক্ত নয়। তিনি মনে করেন, এই প্রথা চালু হলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শিক্ষকেরাই লাভবান হবেন।

Partha Chatterjee School Teachers controversy standard verification teaching quality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy