Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যত্রতত্র ময়লা নয়, নির্মল বাংলার লক্ষ্যে দৃষ্টান্ত গড়ছে বাসুদেবপুর

শহরে রয়েছে ভ্যাট, ডাম্পিং গ্রাউন্ড। কিন্তু গ্রামে বর্জ্য ফেলার জায়গা বলতে খালপাড়, পুকুর বা রাস্তার ধার। সাধারণ বাসিন্দা তো বটেই, অনুষ্ঠানবাড়ির বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে সে সব জায়গায়। সেই বর্জ্য পচে দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

শহরে রয়েছে ভ্যাট, ডাম্পিং গ্রাউন্ড। কিন্তু গ্রামে বর্জ্য ফেলার জায়গা বলতে খালপাড়, পুকুর বা রাস্তার ধার। সাধারণ বাসিন্দা তো বটেই, অনুষ্ঠানবাড়ির বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে সে সব জায়গায়। সেই বর্জ্য পচে দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

গ্রামীণ এলাকায় এমন ছবি পরিচিত হলেও এ বার অন্য পথে হাঁটতে চলেছে উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের বাসুদেবপুর পঞ্চায়েত। বর্জ্য সংগ্রহ করে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা এবং তা থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরির প্রকল্প হয়েছে এখানে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর তার উদ্বোধন হওয়ার কথা। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এমন প্রকল্প হাওড়ায় বাসুদেবপুরেই প্রথম চালু হচ্ছে বলে জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর।

কী আছে এই প্রকল্পে?

জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পে প্রতিটি বাড়ি থেকে রোজ বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এর জন্য প্রতিটি পরিবারকে দু’টি করে বালতি দেওয়া হবে। একটি বালতিতে পচনশীল ও অন্যটিতে পচনশীল নয় এমন বর্জ্য ফেলা হবে। পঞ্চায়েতের তরফে ওই বর্জ্য এনে ফেলা হবে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানে ওই বর্জ্য আলাদাভাবে চিহ্নিত করার পর তা থেকে বিভিন্ন রকমের পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরি করা হবে। যেমন কেঁচো সার প্রকল্প, হাতে তৈরি কাগজ (হ্যান্ডমেড)। বর্জ্য সংগ্রহ, সেগুলি গাড়িতে প্রকল্পের জায়গায় আনা ও তা থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরির জন্য পৃথক কর্মীও নিয়োগ করা হয়েছে। এই কাজের জন্য কেনা হয়েছে পাঁচটি হাতগাড়ি।

পুর এলাকায় বর্জ্য ফেলার ভ্যাটের ব্যবস্থা থাকলেও পঞ্চায়েত এলাকায় সে সবের বালাই নেই। এতে পরিবেশও দূষিত হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে বছর দুই আগেই আইএসজিপি প্রকল্পে বিশ্বব্যাঙ্ক রাজ্যের ২০০টি পঞ্চায়েতকে বেছে নেয়। হাওড়ায় মোট চারটি পঞ্চায়েতের নাম এই তালিকায় ছিল। বাসুদেবপুর ছাড়া বাকি তিন পঞ্চায়েত হল, শ্যামপুর ১ ব্লকের রাধাপুর, উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের খলিশানি এবং আমতা ১ ব্লকের গাজিপুর। সর্বত্রই কাজ শুরু হলেও প্রকল্প চালু হচ্ছে বাসুদেবপুরেই। এর জন্য স্থানীয় শুঁড়িখালি গ্রামে এক বিঘা জমিও নেওয়া হয়েছে।

বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বিলেশ্বর পাঁজা বলেন, ‘‘আমরা গ্রামে কোথাও কণামাত্র বর্জ্য ফেলতে দেব না। আপাতত ৭টি গ্রাম সংসদের জন্য প্রকল্পটি চালু হয়েছে। বাকি সংসদগুলিতেও ক্রমান্বয়ে তা চালু করা হবে।’’

কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগের এই প্রকল্পে মিশন নির্মল বাংলা এবং স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প থেকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতকে। আইএসজিপি প্রকল্পে প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। বাকি কাজ অর্থাৎ জমি সংগ্রহ থেকে শুরু করে গ্রামবাসীদের বোঝানো, কর্মী নিয়োগ সবই করেছে পঞ্চায়েত।

কাজটা অবশ্য সহজ ছিল না। কারণ, গ্রামবাসীরা মাঠে, ঘাটে, খালের ধারে বর্জ্য ফেলতেই অভ্যস্ত। তাই প্রকল্পের গুরুত্ব বোঝাতে এক বছর ধরে গ্রামবাসীদের নিয়ে একাধিক আলোচনাচক্র, সভার আয়োজন করা হয়। গ্রাম সংসদের বৈঠকে আলোচনা করা হয়। বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতে ১৬টি সংসদ আছে। তার মধ্যে সাতটি সংসদের জন্য প্রকল্পটি চালু হচ্ছে। ওই সাতটি সংসদের বাসিন্দারা লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা বাইরে কোথাও আবর্জনা ফেলবেন না। পঞ্চায়েতের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্প চালু রাখার জন্য তাঁরা প্রতি মাসে ২০ টাকা করে পরিষেবা কর পঞ্চায়েতকে দেবেন।

আপাতত এঁদের হাত ধরেই ‘নির্মল’ হওয়ার পথে বাসুদেবপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumping ground Trash Basudevpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE