Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে ২৭টি নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল

এ যেন ভোজবাজি! যে আইনকে ‘ভোঁতা’ বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ এত দিন দায় এড়াতেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বৈঠকের পরে সেটাই হঠাৎ হয়ে পড়েছে ক্ষুরধার!

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৯
Share: Save:

এ যেন ভোজবাজি!

যে আইনকে ‘ভোঁতা’ বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ এত দিন দায় এড়াতেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বৈঠকের পরে সেটাই হঠাৎ হয়ে পড়েছে ক্ষুরধার!

কর্তাদের একাংশ বরাবর যুক্তি দিয়েছেন, রাজ্যে ২০০৩ সালের যে ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট কার্যকর রয়েছে তাতে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শো-কজের বেশি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাই যতই অভিযোগ আসুক, কারও লাইসেন্স বাতিল হয়নি। স্মরণকালে একমাত্র ঢাকুরিয়া আমরির লাইসেন্স বাতিল হয়েছিল অগ্নিকাণ্ডের জেরে।

অথচ গত ২২ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। যে স্বাস্থ্যকর্তারা ২০০৩-এর আইনকে ‘দুর্বল’ বলতেন, তাঁরা এখন সেই পুরনো আইন প্রয়োগ করেই রাজ্য জুড়ে ২৭টি নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করেছেন। শুধু তা-ই নয়, সেগুলিকে পুরোপুরি বন্ধই করে দিয়েছেন। আর এ সবই হয়েছে গত সাত দিনে!

বন্ধ নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে ৫টি কলকাতার। গত এক সপ্তাহে শো-কজ করা হয়েছে আরও ৭০টিকে। তাদেরও কয়েকটি বন্ধ হতে পারে বলে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি।

আরও পড়ুন: নয়া স্বাস্থ্য বিলে পুরনোরই ছায়া

এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘আইনে হাসপাতাল বন্ধ করার উপায় ছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। এখন মুখ্যমন্ত্রীর চাপে পড়ে সব হচ্ছে।’’ রাজ্যে নথিভুক্ত নার্সিহোম ও বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ২০৮৮টি। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, গত তিন বছরে মাত্র ৯৮২টিতে পরিদর্শন হয়েছিল। অধিকাংশই অভিযোগের ভিত্তিতে। অথচ শুধু গত দু’মাসে অভিযান হয়েছে ৯৪২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে! স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গত বছরের শেষে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শিশু পাচার চক্র প্রকাশ্যে আসার পরে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে অভিযান শুরু হয়েছিল। সেই অভিযানই জেট-গতি পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে।

রাজ্যের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ১ টাকায় বা ভর্তুকিতে জমি পেয়েছিল। বিনিময়ে তারা প্রতি মাসে কিছু গরিব রোগীকে নিখরচায় পরিষেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। কিন্তু অভিযোগ, অনেকেই চুক্তি মানছে না। তারা কারা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রথম দফায় এমন ১১টি বেসরকারি হাসপাতালকে স্বাস্থ্য দফতর চিহ্নিত করেছে, যারা এক বা একাধিক শর্ত মানেনি। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের দাবি, এদের ফাইলই নাকি হারিয়ে গিয়েছিল!

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অবশ্য বলেছেন, ‘‘অনেক খুঁজে চুক্তিপত্রগুলি মিলেছে। সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখা হচ্ছে। অনেকে মুখে অনেক দাবি করছেন, কিন্তু কাগজে দেখাতে পারছেন না। যারা চুক্তি মানেনি, নতুন আইনে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার সংস্থান রাখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

private Hospital Health Bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE