প্রতীকী ছবি
সুরক্ষার বন্দোবস্ত সত্ত্বেও সাইবার সরণিতে লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে হামেশাই। এটিএম তো বটেই, সেই সঙ্গে অনলাইনে কেনাকাটা ও টাকা লেনদেন কী ভাবে আরও নিরাপদ হতে পারে, ব্যক্তিগত তথ্য কী করে অধিকতর সুরক্ষিত রাখা যায়, তার দিশা দেখাচ্ছেন তিন বাঙালি বিজ্ঞানী তাপস মজুমদার, অরবিন্দ মল্লিক ও প্রভাকর পাল। তাপসবাবু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং অরবিন্দবাবু কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের সহকারী অধ্যাপক। আর প্রভাকরবাবু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গবেষক।
অনলাইনে কেনাকাটা এবং টাকা লেনদেন উত্তরোত্তর বাড়ছে। সেই লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাসওয়ার্ড। এর মাধ্যমে যন্ত্র প্রথমে গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করে। তার পরেই আর্থিক লেনদেন হয়। সেই তথ্যের সুরক্ষা পদ্ধতি কী ভাবে আরও নিখুঁত করা সম্ভব, তা বাতলে দিচ্ছেন ওই তিন বাঙালি বিজ্ঞানী।
ওই গবেষকদের বক্তব্য, তথ্য সুরক্ষার ঘাটতিতে হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধ বাড়ছে এবং বহু মানুষ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন যে-পদ্ধতির কথা তাঁদের গবেষণায় বলা হয়েছে, তাতে হ্যাকিংয়ের মতো সাইবার সরণির অপরাধ কমবে। এই পদ্ধতি এটিএম, অনলাইন ব্যাঙ্কিং, মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মতো সর্বত্রই কার্যকর হবে বলে জানাচ্ছেন অরবিন্দবাবু।
পাসওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে গোপনীয় করে রাখার জন্য একটি সুরক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। তাকে বলা হয় ‘এনক্রিপশন’ বা তথ্যকে সঙ্কেতে বদলে ফেলে সুরক্ষিত রাখা। বর্তমানে তথ্যকে বৈদ্যুতিন সঙ্কেতে বদলে ফেলে সুরক্ষিত করা হয়। কিন্তু তাপসবাবুরা দেখিয়েছেন, বৈদ্যুতিন সঙ্কেতের বদলে তথ্যকে আলোক-রাসায়নিক সঙ্কেতে বদলে নিলে তা আরও বেশি সুরক্ষিত করা সম্ভব। তাঁদের গবেষণাপত্র আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির পত্রিকা ‘এসিএস অ্যাপ্লায়েড ইলেকট্রনিক মেটেরিয়ালস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার পেটেন্ট নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ওই বিজ্ঞানীরা।
তাপসবাবুরা জানাচ্ছেন, এনক্রিপশনের মূল হল গণিত। তাই তথ্যকে গাণিতিক পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিন সঙ্কেতে পরিবর্তনের বদলে গাণিতিক পদ্ধতি এবং আলোক-রাসায়নিক পদ্ধতির মেলবন্ধনের মাধ্যমে তথ্য সুরক্ষা বাড়ানো যে সম্ভব, সেটাই তাঁরা প্রমাণ করেছেন। বিষয়টিকে সহজে বোঝানোর ক্ষেত্রে বলা যায়, তাঁদের পরিকল্পিত ব্যবস্থায় ইনপুট বোতামগুলির সঙ্গে যুক্ত থাকবে কিছু রাসায়নিক রঞ্জক পদার্থের মিশ্রণ। সেই বোতাম থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক রঞ্জকের পরিমাণের পাশাপাশি প্রত্যেক রঞ্জকের নিজস্ব প্রকৃতি, গাঢ়ত্ব এবং তাদের থেকে উৎপন্ন আলোর তরঙ্গ থেকেই আলোক-রাসায়নিক সঙ্কেত তৈরি হবে। এই পদ্ধতির সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি জটিল আর নিরাপদ হওয়ায় হ্যাকিংয়ের মতো সাইবার অপরাধ কমানো যাবে।
ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই পদ্ধতিতে অগণিত পাসওয়ার্ডকে যেমন সুরক্ষিত রাখা যাবে, তেমনই পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি প্রতি বার ব্যবহারের সময় ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) উৎপন্ন করে গ্রাহককে রাখা যাবে দ্বিস্তর সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে। তাতে পরিচয় যাচাই যেমন নিখুঁত হবে, তেমনই হ্যাকারদের অনুপ্রবেশও কার্যত বন্ধ করা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy