Advertisement
E-Paper

রবি এসে দাঁড়াতেই মা দিলেন নতুন জামা

মন্ত্রী হয়ে প্রথম বার বাড়ি এসে কিছু ক্ষণের জন্য ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বরাবরই স্কুলের পরীক্ষায় পাশ করে যখন বাড়ি ফিরতেন, নতুন জামা-প্যান্ট হাতে তুলে দিতেন মা। ৬৩ বছর বয়সে ফের সেই দিনটাই যেন ফিরে এল।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:২৫
মায়ের আশীর্বাদ নিলেন মন্ত্রী। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

মায়ের আশীর্বাদ নিলেন মন্ত্রী। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

মন্ত্রী হয়ে প্রথম বার বাড়ি এসে কিছু ক্ষণের জন্য ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

বরাবরই স্কুলের পরীক্ষায় পাশ করে যখন বাড়ি ফিরতেন, নতুন জামা-প্যান্ট হাতে তুলে দিতেন মা। ৬৩ বছর বয়সে ফের সেই দিনটাই যেন ফিরে এল। শনিবার সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী যখন বাড়িতে পা রাখলেন, তখন সদর দরজায় নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবী হাতে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা।

দেখে চোখে জল রবীন্দ্রনাথবাবুর। বললেন, “এটা জীবনের সব থেকে বড় পাওনা। মায়ের দেওয়া নতুন জামাকাপড় আমার কাছে আশীর্বাদ।” তাঁর মা বললেন, “আমি খুব খুশি হয়েছি। মানুষের জন্য আরও কাজ কর তুই।”

শনিবার কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস চেপে নিজের বাড়ি কোচবিহারে ফেরেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁকে ঘিরে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, আবেগে ভেসে যায় গোটা শহর। সবুজ আবিরে চারদিকে ঢেকে যায়। বাজি ফুটতে থাকে অনবরত। চলে লাড্ডু বিলি। কেউ রবীন্দ্রনাথবাবুকে জড়িয়ে ধরেন। কারও পায়ে ছুঁয়ে প্রণাম করেন রবীন্দ্রনাথবাবু নিজেও।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল শুক্রবার বিকেল থেকেই। মন্ত্রী শহরের যে পাড়ায় বাস করেন তাঁর চারদিকে ফুল ও বেলুন দিয়ে তোরণ তৈরি করা হয়। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে পেতে দেওয়া হয় সবুজ কার্পেট। কুড়ি কুইন্টাল আবির মজুত করে রাখেন দলের কর্মীরা। পাঁচশ প্যাকেট নানা রকমের আতসবাজি প্রস্তুত করে রাখা হয়। সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। একটি নিউ কোচবিহার স্টেশন চত্বরে। দ্বিতীয়টি দলের জেলা অফিসের সামনে। আর শেষটি তাঁর বাড়ির সামনে নতুন পল্লিতে।

সকাল তখন ৯ টা। নিউ কোচবিহার ষ্টেশনে তিল ধারণের জায়গা নেই। মানুষে মানুষে ঠাসাঠাসি। মঞ্চ থেকে স্লোগান উঠছে ‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জিন্দাবাদ’। সাড়ে ৯ টার কিছু পরে ট্রেন থেকে নামেন তিনি। তাঁকে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানুষের ঢল স্টেশন থেকে বাইরে বেরোয়। তাঁর গলায় পড়িয়ে দেওয়া একের পর এক ফুলের মালা। এর পরেই শুরু হয় সংবর্ধনার পর্ব। সারা রাত ট্রেন যাত্রা করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও কাউকেই নিরাশ করেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। কাউকে সংবর্ধনা না দিয়ে ফিরে যেতে দেননি। জলের ধারার মতো ঘাম ঝরছিল। অনুগামীদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, “দাদা আপনি এবারে বিশ্রাম নিন।”

তবে কথা শোনেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। দলীয় অফিসে সংবর্ধনা সেরে বেলা ১২ টার পরে নিজের বাড়ি নতুনপল্লিতে যান তিনি। সেখানে তখন মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন মহিলারা। এলাকার শিশুরা নাচ-গানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। গান বাজছে। রবীন্দ্রনাথবাবুর মেয়ে পাপিয়া ঘোষও জামদানি শাড়ি পড়ে ‘তাঁর বাবাকে’ স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আজ তো উৎসবের দিন। সাধারণ মানুষকে দেখছি তাঁরা সবাই উৎসবে মেতেছেন। গ্রাম থেকে কত মানুষ এসেছেন। আমার খুব ভাল লাগছে।”মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি ডাওয়াগুড়ি থেকেও বহু মানুষ এ দিন যোগ দেন অনুষ্ঠানে।

যখন তিনি বাড়ি ঢুকেছেন তখন দুপুর গড়িয়েছে। মায়ের দেওয়া নতুন জামা হাতে নিয়ে ঘরে ঢোকেন তিনি। হলুদ তাঁতের শাড়ি পড়ে তখন স্বামীর অপেক্ষায় তাঁর স্ত্রী রেবাদেবী।

নিজে হাতে স্বামীর প্রিয় ধোকার ডালনা, চাল কুমড়ো ভাজা, ডাল, সব্জি দিয়ে ভাত বেড়ে দেন। সঙ্গে চাটনি আর টক দই। রেবাদেবী বলেন, “শনিবার করে তিনি নিরামিষ খান। আজও যাতে সেটাই হয়, তা জানিয়ে দিয়েছিলেন।”

এত কিছুর আয়োজন দেখে অভিভুত রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “গ্রামের ছেলে আমি। মানুষের সেবা করাকেই জীবনে ব্রত করেছি। কখনও ভাবিনি এত বড় জায়গা পাব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি আমার উপরে ভরসা করেছেন। আমি সেই ভরসার মর্যাদা দেব।”

rabindranath ghosh MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy