ছবি: সংগৃহীত।
সুকুমার রায়ের ভাষায় বলতে গেলে, খাচ্ছে। কিন্তু গিলছে না!
আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএমের তাত্ত্বিক নেতা প্রকাশ কারাটের অবস্থান এখন অনেকটা সেই রকমই। অনড় অবস্থান থেকে একটু নড়ে বসে তিনি মেনে নিচ্ছেন, সমদূরত্বের নীতি এই মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয়। বিজেপি-আরএসএসই এখন সব চেয়ে বড় বিপদ। সিপিএমের অন্দরে সীতারাম ইয়েচুরি শিবিরের দীর্ঘ দিনের লড়াইয়ের ফল বলতে এটুকুই যে, খোদ কারাটও মানছেন বিজেপি-র বিপদের কথা। কিন্তু তার পর? বিজেপি-র ভয়ঙ্কর বিপদের মোকাবিলায় কী করণীয়? সেখানেই ভবি ভোলার নয়!
সর্বভারতীয় একটি দৈনিককে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মেনেছেন, গৈরিক বিপদের মোকাবিলায় সব ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তি একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলুক— এটাই এখন ‘স্বাভাবিক চাহিদা’। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ বা ইরফান হাবিব থেকে প্রভাত পট্টনায়কের মতো বিদ্বজ্জনেরা তাই এই পথের কথা বলছেন। কিন্তু কারাটের মতে, মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিচার অন্যদের সঙ্গে মেলে না। তাঁর সেই পৃথক বিচার বলছে, বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর মঞ্চে অন্যান্য দলের সঙ্গে কংগ্রেসও স্বাগত। সংসদের ভিতরে-বাইরে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই মানুষের স্বার্থে কর্মসূচি হোক। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁত বা সমঝোতা করতে যাওয়া মানে স্বখাতসলিলে ডুবে যাওয়া! নব্য উদারনীতির বিরুদ্ধে চিরাচরিত সংগ্রামের সঙ্গে আপস করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তে গেলে বামপন্থী রাজনীতিকে ‘দেউলিয়া’ করে দেওয়া হবে। আধার বা জিএসটি প্রকৃতপক্ষে যে কংগ্রেসেরই মস্তিষ্কপ্রসূত, তাদের মুখে ওই সব বিষয়ে সমালোচনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কারাট।
তার মানে হাতে রইল পেন্সিল!
তা হলে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বামেরা কী করবে? ক্ষয়িষ্ণু শক্তি নিয়ে তারা বিজেপি-র সঙ্গে কী ভাবে লড়বে? কারাটের যুক্তি, কেরল এবং ত্রিপুরায় প্রধান শক্তি হিসাবে বামেরাই বিজেপি-র সঙ্গে সম্মুখ সমরে আছে। বাংলায় তৃণমূল মাঝখান থেকে বামেদের উপরে আক্রমণ চালিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করে দিয়ে অসুবিধা তৈরি করছে। সারা দেশে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল নিজ এলাকায় শক্তিশালী হলেও চরিত্রে তারা সকলেই সুযোগসন্ধানী। কখনও বিজেপি-র সঙ্গে তো কখনও তারা কংগ্রেসের সঙ্গে। এমতাবস্থায় ২০১৯ সালে ভোটের আগেই ভেবে দেখা হবে, কাদের সঙ্গী করা যাবে। আর তার আগে ২০১৮-র এপ্রিলে হায়দারাবাদ পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হবে সমদূরত্বের রাজনৈতিক লাইন কতখানি পরিবর্তন করা যায়।
সিপিএমের পলিটব্যুরোর এই প্রভাবশালী সদস্যের বক্তব্য শুনে বাম নেতাদের একাংশের প্রশ্ন, রাস্তায় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে ভোটের সময়ে হাত ছেড়ে দেওয়া ঠিক কী রকম নীতি? যা এই বাংলায় সবংয়ের উপনির্বাচনেও হচ্ছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে শক্তি প্রমাণের জায়গা নির্বাচন। রাস্তার আন্দোলনে একজোট থেকে ভোটে আলাদা হয়ে বিজেপি-র সুবিধা করে দিয়ে কী লাভ? এক বাম নেতার মন্তব্য, ‘‘ডুডু ও তামাক, দু’টো একসঙ্গে খেতে চাইলে মুশকিল! এর চেয়ে যদি বলে দেওয়া হয়, সর্বত্র বাম ঐক্য গড়েই লড়াই হবে, ভোট নিয়ে ভাবনা নেই, তাতে একটা স্বচ্ছতা থাকে।’’
সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘সংসদের বাইরেও কংগ্রেসকে সঙ্গে নেওয়া যাবে, এই কথা কারাট এর আগে কখনও বলেননি। একটু হলেও আমরা তো এগিয়েছি!’’
বাকি কাজ হায়দরাবাদে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy