কেন্দ্রীয় ভাবে স্নাতকোত্তরে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ চালু করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাজেহাল। এতটাই যে, স্নাতকোত্তর পরীক্ষা থেকেই হাত তুলে নিলেন পরীক্ষা নিয়ামক এবং তাঁর দফতর!
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক জয়ন্ত সিংহ সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তাঁর দফতর ভয়ঙ্কর কর্মী-সঙ্কটে ভুগছে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে নিজেদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ফলে গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থা ঘিরেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারা কী ভাবে কখন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন, উত্তরপত্রই বা যাচাই করবেন কারা, সেই সব প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষা ও মানের মধ্যে সামঞ্জস্য কী ভাবে রক্ষা করা যাবে— সেই প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠছে শিক্ষা শিবিরে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আসলে কেন্দ্রীয় ভাবে সিবিসিএস চালু করতে গিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়ে গিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্নাতকোত্তর পাঠ দেওয়া হয় বেশ কিছু কলেজেও। এত দিন তারা নিজেদের মতো করেই পরীক্ষা নিত। এ বারেই কেন্দ্রীয় ভাবে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই যে-ভাবে তা চালু করা হয়েছে, তার বিরোধিতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাংশ। একেই তো কর্মী কম, তার উপরে পুরো পরীক্ষার আয়োজন করতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়ছে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতর। সেই জন্যই স্নাতকোত্তর পরীক্ষা থেকে হাত তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানান দফতরের এক কর্তা।
আরও পড়ুন: স্নাতকোত্তরের পরীক্ষায় নেই নিয়ামক বিভাগ
কিন্তু বিভাগীয় প্রধানদের আশঙ্কা, এর ফলে পুরো পরীক্ষা প্রক্রিয়াতেই জট পাকিয়ে যাবে। তাঁরা যে-সব প্রশ্ন তুলেছেন, তার মধ্যে আছে: ১) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপাবেন কারা? ২) উত্তরপত্র যাচাই ও বণ্টন হবে কী ভাবে? ৩) প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক নিয়োগ কি বিভাগই করবে? ৪) যে-সব কলেজে স্নাতকোত্তরের পাঠ দেওয়া হয়, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? উত্তরপত্র কারা দেখবেন? ৫) কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পরীক্ষার সমতা রক্ষায় যে-পদক্ষেপ করা হয়েছিল, সেটা কি ব্যর্থ হল?
স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিবিসিএস পদ্ধতির পঠনপাঠন চালু করার পর থেকেই ক্রমাগত বিতর্ক তৈরি হয়ে চলেছে। সুষ্ঠু ভাবে পাঠ্যক্রম চালু করতে গিয়েই হোঁচট খেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বারে বারে বিরোধ বেধেছে বিভিন্ন কলেজ-কর্তৃপক্ষের। তার পরে এখন এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
শিক্ষক সংগঠন কুটা-র সম্পাদক পার্থিব বসু বলেন, ‘‘এটা বিভ্রান্তিকর। বিজ্ঞপ্তিতে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। পরীক্ষার ব্যবস্থা শিক্ষকেরা করবেন কী ভাবে? এটা অবিশ্বাস্য!’’ বক্তব্য জানতে পরীক্ষা নিয়ামক জয়ন্তবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy