E-Paper

‘বাড়িই নেই, প্রদীপ জ্বালাব কোথায়?’ আক্ষেপ তিস্তা পারে

শহরের মতো গ্রামের নানা বাড়ি আলোর মালায় সেজে উঠেছে। রঙিন আলপনা আঁকা হয়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২৭
আমগুড়ির খাটরবাড়ি এলাকায় বেশ কিছু পরিবার এখনও রয়েছে জলঢাকা নদীর বাঁধের উপরে।

আমগুড়ির খাটরবাড়ি এলাকায় বেশ কিছু পরিবার এখনও রয়েছে জলঢাকা নদীর বাঁধের উপরে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

বেড়ার দেওয়াল ভেসে গিয়েছে। কংক্রিটের সরু মেঝের উপরে পলিমাটির স্তূপ। শনিবার গিয়ে জমাট পলির কিছুটা সরিয়ে এলেন। আবার যাবেন আজ, রবিবার। ভাঙা মেঝেতেই চোদ্দোটির মধ্যে একটি প্রদীপ জ্বালাবেন কান্দু রায়। তার পরে ফিরে আসবেন ত্রাণ শিবিরে।

যত দিন যাচ্ছে ত্রাণ শিবিরে আশ্রিতের সংখ্যা কমছে। কিন্তু যাঁদের ঘরবাড়ি মোটেই মাথা গোঁজার মতোও নেই, তাঁরা রয়ে গিয়েছেন শিবিরে। চোদ্দো প্রদীপ, কালীপুজো থেকে দীপাবলি— ত্রাণ শিবিরেই কাটবে তাঁদের। জলপাইগুড়ির আমগুড়ির বেতগাড়ার জলঢাকা বাঁধের উপরে দিন কাটছে কান্দু রায়দের। প্রশাসনের আশ্বাস মিলেছে, সরকারি ঘর মিলবে। যদিও ঘর তৈরিতে সময় লাগবে বহুদিন। ততদিন কী ভাবে কাটবে ত্রাণ শিবিরে?

শহরের মতো গ্রামের নানা বাড়ি আলোর মালায় সেজে উঠেছে। রঙিন আলপনা আঁকা হয়েছে। তারই পাশে জলঢাকা, তিস্তা নদীর দুই পারে যেন ঝপ করে নেমে আসা অন্ধকার আরও গাঢ় হয়েছে। জলঢাকা নদীর বাঁধের উপরে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে থাকা কান্দু বলেন, “ত্রাণ পাচ্ছি। কিন্তু বাড়িঘর যা ছিল, নদী ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখন থাকব কোথায়? প্রতিদিন গিয়ে একটু একটু করে পলি সরাচ্ছি। উৎসবের দিনে একটা প্রদীপ তো জ্বালাতে হবে।”

তিস্তা নদীর পারেও ত্রাণ শিবিরে দিন কাটছে বাসিন্দাদের। ধূপগুড়ির হোগলাপাতা এলাকার বাসিন্দাদের রেললাইনের পাশে বসে থাকতে হচ্ছে এখনও। নাগরাকাটার বামনডাঙাতেও ত্রাণশিবির ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার উপায় নেই বেশ কিছু পরিবারের। শিবিরগুলিতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, কবে মিলবে সরকারি বাড়ি। যদিও প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, যথাযথ সমীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি তৈরি সম্ভব নয়। সরকারি নির্দেশ তেমনই। জলপাইগুড়ি জেলায় চোদ্দো হাজারেরও বেশি বাড়ি জলমগ্ন হয়েছে বলে প্রশাসনের রিপোর্ট। কিন্তু কার বাড়ি, কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কে-কে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার উপযুক্ত, সে সমীক্ষা এখনও হয়নি বলে দাবি প্রশাসনের।

আমগুড়ির মধু রায় বলেন, “সরকারি নির্দেশ শুনেছি। প্রশাসন থেকে আমাদের নামও নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পলিথিনের নীচে আর কত দিন কাটানো যায়। আমাদের প্রথা, চোদ্দো প্রদীপ জ্বালাতে হয়। বাড়িই নেই, প্রদীপ জ্বালাব কোথায়!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy