Advertisement
E-Paper

নজরবিহীন মেলা, প্রশ্ন পথ নিয়েও

কচুয়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘মেলার পরে চুন-ব্লিচিং ছড়ানো, সাফাই কর্মী নিয়োগের জন্য সামান্য টাকা নেওয়া হয়েছিল।’’

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও  শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৭
নির্বিকার: পাশের অস্থায়ী দোকানঘরই ভেঙে পড়েছিল। তবু কচুয়ায় শনিবারও এমন এক দোকানে চলছে বেচাকেনা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নির্বিকার: পাশের অস্থায়ী দোকানঘরই ভেঙে পড়েছিল। তবু কচুয়ায় শনিবারও এমন এক দোকানে চলছে বেচাকেনা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

ছোট দোকানিদের কাছ থেকে রসিদ দিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছিল পঞ্চায়েত। তার পর চারটে বাঁশের খুঁটি লাগিয়ে পাটাতন ফেলে দোকানিরা তৈরি করেছিলেন অস্থায়ী দোকান। বিদ্যুতের খরচ আলাদা। কেউ ‘হুক’ করেও টেনেছিলেন লাইন।

এ ভাবেই কচুয়ায় লোকনাথ মন্দিরে ঢোকার মুখে পুকুরের উপরে তৈরি হয়েছিল ১৮টি দোকান। যার ১৫টিই ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ে বৃহস্পতিবার রাতে। সরকারি হিসেবে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ গিয়েছে ৫ জনের।

কচুয়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘মেলার পরে চুন-ব্লিচিং ছড়ানো, সাফাই কর্মী নিয়োগের জন্য সামান্য টাকা নেওয়া হয়েছিল।’’ কিন্তু পুকুরের উপরে কী ভাবে দোকান তৈরি হচ্ছে, তা কি দেখার দায়িত্ব নয় পঞ্চায়েতের? আমতা আমতা করে ফরিদা বলেন, ‘‘যাঁরা দোকান দিয়েছিলেন, তাঁরা গত তিরিশ বছর ধরে এ ভাবেই ব্যবসা করছেন। কে কী ভাবে দোকান তৈরি করেছিলেন, তা দেখা হয়নি।’’ দোকানিরাও জানালেন, কারও থেকে ৩০, কারও থেকে ৫০ টাকা নিয়েছিল পঞ্চায়েত। কিন্তু কে কী ভাবে দোকান তৈরি করছেন, তা নিয়ে কেউ তাঁদের কিছু বলেননি।

অথচ পুকুরপাড়ে দোকান তৈরির অনুমতিই দেওয়া হয়নি বলে জানাচ্ছেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক ভিভেক ভোঁসমে। তা হলে? বসিরহাট জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়া দোকান কী ভাবে বসল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীও। পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মাটিয়া থানার ওসি আপাতত সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মহকুমা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন মেলা চলছে। তাই তদন্তকারী দল সোমবার এলাকায় যাবে। শুক্র ও শনিবার মৃত পাঁচ জনের পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।

তবে শুধু অস্থায়ী দোকানই নয়, রাস্তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে নজরদারির অভাবের অভিযোগও জোরদার হচ্ছে এই ঘটনায়। যেমন, মন্দির কমিটি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, তিনটি পথে মন্দিরে যাতায়াত করতে পারেন পুণ্যার্থীরা। কিন্তু এ বছর বাবর আলি মোড় এবং কাহারপাড়ার রাস্তা সে ভাবে ব্যবহারই হয়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন। অভিযোগ, ওই দু’টি রাস্তার দিকনির্দেশই ছিল না। ফলে মূল ভিড় পুকুরপাড়ের পুরনো সরু রাস্তা ধরেই মন্দিরের দিকে এগিয়েছে এবং মন্দির থেকে বেরিয়েছে। মহকুমাশাসক এ ক্ষেত্রেও দাবি করেছেন, ব্লু প্রিন্টে ঢোকা-বেরোনোর পথ আলাদা ছিল। আর তিনটি রাস্তাই পুণ্যার্থীরা ব্যবহার করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়েও। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানালেন, বৃষ্টির পরে পুলিশকর্মীরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। দড়ির তৈরি লকগেট নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। মনোজ রায় স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে গত কয়েক বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘রাত পৌনে ২টো নাগাদ দেখি, হাজার হাজার লোক লকগেটে আটকে। মন্দিরমুখী মূল স্রোতকে আটকে রাখা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত।’’

এত গুরুদায়িত্ব কেন ছাড়া হল সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরে? জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, পুলিশকর্মী (৩০০ পুলিশ, ৫০০ সিভিক ভলান্টিয়ার) ও কর্তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনার পর সেখানে যান বসিরহাটের তৎকালীন পুলিশ সুপার সি সুধাকর। তিনি মন্তব্য করতে চাননি। লোকনাথ মিশনের সভাপতি বিষ্ণুপদ রায়চৌধুরীর তো এক কথা, ‘‘কে কোথা দিয়ে আসবেন-যাবেন, তা দেখার কথা ছিল পুলিশ-প্রশাসনের।’’

Accident Death Kachua Loknath Temple
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy