Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সৌরভের খুনিদের সাজা কবে, জানতে চান বাবা

গোটা একটা বছর ঘুরে গেল। এখনও মিলল না বিচার। ভিজে চোখে ছেলের বাৎসরিক কাজ করছেন বাবা। মা, দাদা, দিদিরা অঝোরে কেঁদে চলেছেন। চোখের সামনে বারেবারে ফিরে আসছে সেই ছবিটা। রেললাইনে ছিন্নভিন্ন একটা দেহ। রাতে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য যে দেহটা শিয়ালদহ-বনগাঁ রেললাইনে ছুড়ে দিয়েছিল আততায়ীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

গোটা একটা বছর ঘুরে গেল। এখনও মিলল না বিচার।

ভিজে চোখে ছেলের বাৎসরিক কাজ করছেন বাবা। মা, দাদা, দিদিরা অঝোরে কেঁদে চলেছেন।

চোখের সামনে বারেবারে ফিরে আসছে সেই ছবিটা। রেললাইনে ছিন্নভিন্ন একটা দেহ। রাতে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য যে দেহটা শিয়ালদহ-বনগাঁ রেললাইনে ছুড়ে দিয়েছিল আততায়ীরা।

এক বছর আগে ঠিক এই দিন— ৫ জুলাই সকালে বামনগাছি এবং দত্তপুকুর স্টেশনের মাঝামাঝি রেললাইনের উপর পড়ে থাকা সেই ছিন্নভিন্ন দেহ সৌরভ চৌধুরীর। বারাসত কলেজে অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের সেই ছাত্র, এলাকায় দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে যিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

সৌরভ একা নন। তিনি এবং তাঁর কিছু বন্ধুবান্ধব, যাঁরা নিয়মিত খেলাধুলো এবং শরীরচর্চা করতেন। রাত হলেই রাস্তার আলো নিভিয়ে দিয়ে গুন্ডামি, মাতলামি, মহিলাদের বিরক্ত করা যাঁরা বরদাস্ত করতে পারছিলেন না। যাঁদের প্রতিবাদের বদলা নিতে সৌরভকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আততায়ীরা। থেঁতলে -কুপিয়ে মেরে, হাত-পা কেটে, দেহ ছুড়ে দিয়েছিল ট্রেনের সামনে।

তার পর থেকেই আর যেন নিজের মধ্যে নেই সৌরভের বাবা সরোজ চৌধুরী। শনিবার ছেলের বাৎসরিক কাজ করতে-করতে তিনি বারবার কেঁদে ফেলেছেন। বাড়িতে জড়ো হয়েছিলেন সৌরভের স্কুলের বন্ধুরাও। সরোজবাবুকে দেখতে-দেখতে তাঁদের অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে ‘শোলে’ ছবির সেই অন্ধ বাবার কথা, যাঁর ছেলেকে খুন

করে গ্রামে দেহ পাঠিয়ে দিয়েছিল খলনায়ক গব্বর। ভাঙা গলায় যিনি বলে উঠেছিলেন, ‘‘মালুম, দুনিয়াকা সবসে বড়া বোঝ কউন হ্যায়? বাপকি কান্ধে পে বেটাকি জানাজা!’’ সরোজবাবুও যেন সেই বোঝাই বয়ে চলেছেন, আজও।

বোঝা শুধু তাঁর একার নয়। ঘটনাচক্রে, আরও দু’বছর আগে ৫ জুলাই তারিখেই খুন হয়েছিলেন সুটিয়ার প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। সৌরভ খুন হওয়ার মাসখানেক বাদে তাঁদের বাড়িতে এসে সরোজবাবুকে জাপটে ধরে খানিকক্ষণ কেঁদেছিলেন বরুণের বাবা জগদীশ বিশ্বাস। শেষে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে দেখুন। ভরসা রাখুন। আমিও ঠিক আপনার মতো ছেলে হারানো বাবা। সুবিচার নিশ্চয়ই এক দিন মিলবে।’’

কিন্তু সেই বিচার কত দূর এগোল এত দিনে?

সৌরভ খুন হওয়ার পরে অভিযুক্ত ১১ জনকেই ধাপে-ধাপে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে সকলের। এখন বারাসত আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ইতিমধ্যে দিনের পর দিন থানা-আদালত, টিআই প্যারেড, শুনানিতে ক্লান্ত বাড়ির লোকজন। বিচার পেতে আরও কতটা পথ হাঁটতে হবে, তা

আর তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। ছেলের পারোলৌকিক কাজ করতে-করতেই সরোজবাবু বলে ওঠেন, ‘‘ছেলের খুনের বিচার পাওয়ার আগে আমাকে আর কতগুলো বাৎসরিক করতে হবে?’’

কারও মুখে টুঁ শব্দ নেই।

মুখ নামিয়ে চুপ করে বসে থাকেন এক বছরে আরও বুড়িয়ে যাওয়া লোকটিও। গাল ভিজিয়ে জলের ধারা নেমে আসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sourav Murderer punishment police murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE