Advertisement
E-Paper

সাড়া নেই মস্তিষ্কে, তবু প্রচারদলে প্রিয়

প্রায় আট বছর হাসপাতালে শয্যাশায়ী তিনি! শারীরবৃত্তীয় সূচকগুলি ঠিক থাকলেও, মস্তিষ্ক সাড়া দেয় না। তাই স্নান খাওয়া সবই করিয়ে দিতে হয়! শুরুতে কংগ্রেসের নেতাদের মুখে ওঁর অভাব অনুভবের কথা আখছার শোনা গেলেও, এখন কালে ভদ্রে ‘প্রিয়দার’ খোঁজ পড়ে! প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কি কংগ্রেস ভুলেই গেল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:৪৮
২০০৮ সালের মে মাসে নির্বাচনী প্রচারে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।

২০০৮ সালের মে মাসে নির্বাচনী প্রচারে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।

প্রায় আট বছর হাসপাতালে শয্যাশায়ী তিনি! শারীরবৃত্তীয় সূচকগুলি ঠিক থাকলেও, মস্তিষ্ক সাড়া দেয় না। তাই স্নান খাওয়া সবই করিয়ে দিতে হয়! শুরুতে কংগ্রেসের নেতাদের মুখে ওঁর অভাব অনুভবের কথা আখছার শোনা গেলেও, এখন কালে ভদ্রে ‘প্রিয়দার’ খোঁজ পড়ে!

প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কি কংগ্রেস ভুলেই গেল!

কে বলে? অনেক অনেক দিন পরে আজ হঠাৎই অদ্ভুত ভাবে দলের এই বর্ষীয়ান নেতার নাম উঠে এল সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ঘোষণায়! পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের জন্য আজ প্রচার কমিটি, নির্বাচন কমিটি ও ইস্তাহার কমিটি ঘোষণা করেছে এআইসিসি। দেখা গেল, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে চেয়ারম্যান করে নব্বই জনের যে প্রচার কমিটি তৈরি হয়েছে, সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির। তালিকার পনেরো নম্বরে রয়েছেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রিয়বাবুর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও।

ব্যাপারটা অবাক করার মতো নয়? এত বছর শয্যাশায়ী যিনি, পাছে শরীরে কোনও সংক্রমণ ছড়ায়, সে জন্য যাঁকে বাড়িতেও নিয়ে আসা হচ্ছে না, সেই মানুষটি ভোটের প্রচার করবেন কী ভাবে! তবে কি ভুল করে ওঁর নাম রাখা হল তালিকায়?

সংবাদমাধ্যমের ভাবনার ‘ভুল’ শুধরে দিতে যুক্তি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রিয়দা কেন্দ্রে শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। বাংলার মানুষের খুব প্রিয় মানুষটি হাসপাতালে রয়েছেন তো কী! ওঁর ভাবমূর্তি আমরা প্রচারে ব্যবহার করতেই পারি!’’ এখানেই থামেননি জোশী! বলেন, ‘‘বিজেপি যদি রাম, লক্ষ্মণ, হনুমানের মতো পৌরাণিক চরিত্রকে প্রচারে ব্যবহার করতে পারে, তবে কংগ্রেসের এক নেতার কথা কেন আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারব না!’’

সংবাদমাধ্যমে এই যুক্তি দিয়েও দলে পার পাননি জোশী। এআইসিসি-র তালিকা নিয়ে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য উনি বলেন, ‘‘না না ওটা বড় ভুল হয়েছে। শুধরে দিতে বলব।’’ কিন্তু জোশীর যুক্তি শুনে আবার প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এই ব্যাপারটা তো ভাবিনি। তা হলে তো ঠিকই আছে!’’ কিন্তু ঘটনা শুনে খুবই অসন্তুষ্ট দীপাদেবী। বলেন, ‘‘এটা আবার কী? এমন কখনও হতে পারে নাকি!’’ দীপাদেবী জানান, তিনি বিষয়টি হাইকম্যান্ডের নজরে এনেছেন। তাঁর দাবি, তালিকা শুধরে দিতে বলা হয়েছে। ব্যাপারটা শুনে কংগ্রেস সভানেত্রীও ভীষণ অসন্তুষ্ট!

সনিয়া গাঁধীর অসন্তুষ্ট হওয়ারই কথা! কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রসায়নের খোঁজ যাঁরা রাখেন, তাঁরা জানেন প্রিয়রঞ্জনকে কতটা পছন্দ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বাজপেয়ী জমানায় লোকসভায় দলের মুখ্য সচেতক হিসেবে বিজেপি বিরোধী আক্রমণের দুর্গ দায়িত্ব নিয়ে সামলাতেন প্রিয়। মনমোহন সিংহের জমানায় জলসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও সম্প্রচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিভা পাটিলের নির্বাচনের সময়ে প্রিয়বাবুর রাজনৈতিক দৌত্য ও কৌশলের আজও প্রশংসা করেন কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ২০০৮-র ১২ অক্টোবর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রিয়রঞ্জনবাবু স্মৃতি হারিয়েছিলেন। কিন্তু তখন থেকেই তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনের ব্যাপারে ব্যক্তিগত ভাবে যত্নশীল সনিয়া গাঁধী।

তবে এখানেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়! সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে আজ যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দ্বিবেদী লিখেছেন, ‘‘কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সম্মতিক্রমে এই তালিকা প্রকাশ করা হল।’’ প্রশ্ন হল, বিবৃতি প্রকাশের সময় সনিয়া গাঁধী দেখেননি কেন? কংগ্রেসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার যুক্তি, সনিয়া গাঁধী প্রস্তাবে সই করেন ঠিকই। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকরা যে তালিকা পাঠান, তা নিয়ে বিতর্ক না থাকলে সচরাচর সেটা সভানেত্রী পড়েও দেখেন না। তা ছাড়া যে ভাবে প্রচার কমিটি তৈরি হয়, তার উদ্দেশ্য থাকে দলের সবাইকে অংশীদার করা ও খুশি রাখা। কেউ যেন মনে না করেন তাঁকে ভোটের লড়াইয়ের প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচার কমিটিতে নব্বই জনের নাম রয়েছে। যদিও শেষমেশ প্রদেশ সভাপতি, প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান এবং তিন-চার জন শীর্ষ নেতা মিলেই প্রচারের ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে থাকেন।

কংগ্রেসের ঘোষিত কমিটি নিয়ে সমস্যার শেষ এখানেই নয়। ইস্তেহার কমিটিতে রাখা হয়েছে দেবপ্রসাদ রায় তথা আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক মিঠু রায়কে। মিঠুবাবু ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-সিপিএম জোটের বিরোধিতা করে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, জোট হলে তিনি এ বার প্রার্থীও হবেন না। এই অবস্থায় তাঁকে কী ভাবে কমিটিতে রাখা হল? মিঠুবাবু জানান, ‘‘দলের তরফে আমাকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। প্রস্তাব দিলে তখন ‘না’ করে দেব।’’

Congress PriyaranjanDasMunshi MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy