বাঘাযতীন থেকে ট্যাংরা, হাওড়া থেকে সল্টলেক— সম্প্রতি একাধিক জায়গায় আস্ত বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতরও চলেছে শাসকদল এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ রাজ্যের মৎস্য দফতর একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দফতরের তরফে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে নদী, খাল-বিল বা জলাভূমি সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিতে হবে। না হলে সংশ্লিষ্ট নির্মাণ ‘বৈধ’ বলে বিবেচিত হবে না।
একদা জলাভূমি ছিল, এমন কোনও জায়গায় নির্মাণ করতে হলে আগে মৎস্য দফতরের ‘এনওসি’ ছিল বাধ্যতামূলক। এ বার থেকে যুক্ত হচ্ছে ‘সংলগ্ন এলাকা’ও। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যে ভাবে বাড়ি হেলে পড়ছে, সে সব দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, উপ-অধিকর্তাদের নিয়ে একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করতে হবে। সেই বাহিনীই জলাভূমি এলাকায় নির্মাণের বিষয়ে নজরদারি চালাবে। নির্দেশিকায় এ-ও বলা হয়েছে যে, নিয়ম মেনে নির্মাণ না হলে মৎস্য দফতরই তা ভাঙার কাজ করবে। এমন নির্মাণের ফলে সার্বিক ভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও যে বিপন্ন হচ্ছে, তা-ও মানছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। মন্ত্রীও সে কথা অস্বীকার করেননি।
আরও পড়ুন:
এই সিদ্ধান্তে কতটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে? পূর্ত দফতরের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বিমলেন্দু দত্তগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘এখন যেটা জলাভূমি, তার সংলগ্ন এলাকাতেও কয়েক দশক আগে জলাভূমি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। না হলে নির্মাণে ত্রুটি হতে পারে, যা ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কার।’’ উপমা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ধরা যাক, এখন একটি চার একর জায়গায় ঝিল রয়েছে। তার আশপাশ দেখে মনে হচ্ছে স্থলভূমি। সেটা এখন স্থলভূমি হলেও জমির ধরনে তা স্থল না-ও হতে পারে। সেখানে নির্মাণ হলে বিপদের আশঙ্কা থাকে। সে দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘নিয়ম তো অনেকই হয়। কিন্তু তার বাস্তবায়নটাই মূল কথা।’’
আইন অনুযায়ী জলাভূমিকে কখনওই বাস্তুজমিতে পরিণত করা যায় না। তা সত্ত্বেও রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত এই অভিযোগ রয়েছে যে, জলাভূমি ভরাট করে খাতায়-কলমে জমির ধরন বদলে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রশ্নে গোড়া থেকেই ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের এক শ্রেণির আধিকারিকের ভূমিকাকে দায়ী করে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে বলেছেন, বিএলআরও দফতরগুলি টাকা রোজগারের ‘ঘুঘুর বাসা’য় পরিণত হয়েছে। তার জন্য আধিকারিকদের একাংশকে দায়ী করেছেন তিনি। সম্প্রতি গোটা রাজ্যে বড় সংখ্যায় বিএলআরও (ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিক)-কে বদলি করেছে রাজ্যে সরকার।
উল্লেখ্য, ইএম বাইপাসের ধারে বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমি ভরাট করার অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের কাছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় এক শ্রেণির প্রোমোটার এবং সরকারি আধিকারিকদের ‘অসাধু জোট’ সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। সেটাই রুখতে চাইছে মৎস্য দফতর। তবে আসল কথা, সরকারি নির্দেশিকার বাস্তবায়ন।