Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আবাসিকদের ডাক্তারি পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা

হোম থেকে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়া তিন মহিলা আবাসিক রাজি হচ্ছেন না ডাক্তারি পরীক্ষায়। দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরেও ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সমাজকল্যান দফতরের অধীনস্থ রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোম কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৮
Share: Save:

হোম থেকে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়া তিন মহিলা আবাসিক রাজি হচ্ছেন না ডাক্তারি পরীক্ষায়। দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরেও ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সমাজকল্যান দফতরের অধীনস্থ রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোম কর্তৃপক্ষ।

সমাজকল্যান দফতরের অধীনস্থ রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমের ওই তিন মহিলা আবাসিককে বুধবার সকালে রায়গঞ্জ থানার শেরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করেন ডিআইবি ও পুলিশকর্মীরা। তাঁদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী-সহ ২২ ও ২৩ বছর বয়সী দুই তরুণী রয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হোমের মহিলা হস্টেলের শৌচাগারের ঘুলঘুলি ভেঙে পর পর দুটি পাঁচিল টপকে ওই তিন আবাসিক পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হোমে নিয়ে আসলেও ডাক্তারি পরীক্ষা না করিয়ে তাঁদের হোমে রাখতে অস্বীকার করেন হোম কর্তৃপক্ষ। হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথী দাসের যুক্তি, ‘‘যদি ওঁদের উপরে কোনও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ডাক্তারি পরীক্ষায় তা জানা যাবে। তা না করে তাঁদের হোমে রাখলে তার দায় হোম কর্তৃপক্ষের উপরে বর্তাতে পারে। তাই ডাক্তারি পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। তা হয়ে গেলেই তাঁদের হোমে নিয়ে আসা হবে।’’

মূক ও বধির ওই তিন মহিলা আবাসিককে গত বুধবার সকালে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করেন হোম কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হাসপাতালে পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও তাঁদেরকে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে পারেননি। এ দিন দুপুরেও তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে ডাক্তারি পরীক্ষা করাবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপরেই হাসপাতালের তরফে হোম কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথী দাসের নির্দেশে হোমের শিক্ষিকা সুপ্রীতি সরকার হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষায় রাজি হয়ে যাওয়ার জন্য বোঝান। তবে হাসপাতাল সূত্রে খবর, ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে স্পষ্ট করে সুপ্রীতিদেবীকে কিছু জানাননি।

এই পরিস্থিতিতে হোম কর্তৃপক্ষ জোর করে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে সহমত পোষণ করেননি হাসপাতালের প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও মহিলার সম্মতি না থাকলে তাঁকে জোর করে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো যায় না। তা ছাড়া ওই তিন আবাসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে চান না বলে জানিয়েছেন। হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের রাজি করাতে পারলে অবশ্যই ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে।’’ তাঁর দাবি, গত বূধ ও বৃহস্পতিবার তিনি ওই তিন আবাসিককে বুঝিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর চেষ্টা করলেও তাঁরা রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এমনকী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দিন ওই তিন আবাসিককে ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দিষ্ট ঘরে নিয়ে গেলেও তাঁরা সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে ওয়ার্ডে ফিরে আসেন। এর পরেই তাঁরা ডাক্তারি পরীক্ষা করাবেন না বলে লিখিতভাবে প্রসূতি বিভাগের কর্তব্যরত নার্সদের জানিয়ে দেন।

সুপ্রীতিদেবী বলেন, ‘‘আমি ওঁদের বুঝিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষায় হাজির করানো সম্ভব হবে।’’ হোম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই তিন মহিলা আবাসিককে অত্যাচার করা হয়েছে কি না তা ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া কোনওমতেই স্পষ্ট হবে না। তাই ডাক্তারি পরীক্ষা না করিয়ে তাঁদেরকে ঝুঁকি নিয়ে হোমে রাখাটা ঠিক হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE