Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
storm

Storm: ঝড়ে ভেঙেছে ঘর, পোষ্যকে আগলে হারুল

কোচবিহারের সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুধেরকুঠি-দেওয়ানবসে হারুলদের বাড়ি। ওঁদের বাড়ি বটেই, আশেপাশের কয়েকশো বাড়ি ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ে।

পোষ্যকে নিয়ে হারুল।

পোষ্যকে নিয়ে হারুল। নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৫৪
Share: Save:

ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে ভাত খাচ্ছিল হারুল। অদূরেই দাঁড়িয়েছিল ছোট বাছুরটি। হারুলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল। খাওয়া সেরে হারুল ছুটল বাছুরটির কাছে। ‘খুব খিদে পেয়েছে না?’ জিজ্ঞেস করেই তাকে নিয়ে রওনা হয় মাঠের দিকে। ঝড়ে দু’জনেই গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তার পরেও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হারুল এ ভাবেই আগলে রেখেছে নিজেদের প্রিয় পোষ্যকে। তাঁর কথায়, “ওঁর তো খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা তো কষ্টের কথা বলতে পাচ্ছি। বাছুরটি তো তাও পাচ্ছে না। তাই যতক্ষণ পারি কাছে থাকি।”

কোচবিহারের সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুধেরকুঠি-দেওয়ানবসে হারুলদের বাড়ি। ওঁদের বাড়ি বটেই, আশেপাশের কয়েকশো বাড়ি ১৭ এপ্রিলের ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ে। ওই রাতে খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে দেয় পুরো পরিবার। সঙ্গে ছিল বাড়ির দু’টি গরু। তার পরে ত্রিপল দিয়ে কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাই তৈরি করেছে তাঁরা। পাশেই রেখেছে গরু দু’টিকে। রাহুলের বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। তার এক বড় ভাই কোভিডের সময়ে পড়াশোনা শেষ করে কাজের খোঁজ শুরু করেছে। রাহুল মা-বাবার সঙ্গে সংসারের কাজে সাহায্য করে। সুটকাবাড়ি একরামিয়া হাইমাদ্রাসার ছাত্র সে। ওই গ্রামের বাসিন্দা কাউসার আলি ব্যাপারি বলেন, “ওঁরা তো গরু দুটিকে নিজেদের মতো করেই সুস্থ রাখার চেষ্টা করছে। হারুল দু’টি গরুকেই খুব ভালোবাসে।”

শুধু হারুলদের নয়, গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি পরিবারেরই রয়েছে গৃহপালিত পশু। কারও বাড়িতে গরু-ছাগল দু’টোই রয়েছে। কেউ কেউ আবার বাড়িতে হাঁস-মুরগিও পালন করেন। একাধিক বাড়িতে রয়েছে বেড়াল-কুকুর। ঝড়ের দাপটে ওই দিন আতঙ্কে ছোটোছুটি শুরু করেছিল ওই পোষ্যরা। গ্রামের যুবক ফিরোজ কোচবিহার এবিএনশীল কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন। এখনও কাজ জোটাতে পারেননি। এলাকায় টিউশনি করে সংসার চালান তিনি। তাঁর বাড়িতেও দু’টি গরু রয়েছে। ফিরোজ জানান, ঝড়ের সময়ে তাঁদের থাকার ঘর ভেঙে পড়ে। গরু দু’টি যে ঘরে ছিল সেটিও ভেঙে পড়ে। ওঁরা কোনও রকমে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গরু দু’টি ভাঙা ঘরের নিচে চাপা পড়ে আর্তনাদ শুরু করে। ফিরোজ গিয়ে গরু বেঁধে রাখার দড়ি কেটে যায়। একটি গরু সেখান থেকে ছুটে বাইরে পড়ে। আরেকটি সেই ঘরের মধ্যে রাতভর আটকে থাকে। ফিরোজ জামান দু’টি গরুকেই দেখভাল করছেন। তাঁর কথায়, “শুধু আমরা ভাল থাকলে হবে না, ওদেরও ভাল রাখতে হবে। সে চেষ্টাই করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

storm Pet Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE