সদ্যোজাত কন্যাসন্তানের পাশে শুয়ে ফোনে কথা বলছিলেন মা। আচমকাই কেঁদে ওঠে শিশুটি। তাকে শান্ত করতে এগিয়ে আসেন মাঝবয়সী এক মহিলা। শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়ার্ডের ভিতরেই ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। ফোনে কথা বলার সময় মায়ের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে এক সময় উধাও হয়ে গেলেন ওই মহিলা। সম্বিত ফিরতেই মা দেখেন তার সন্তান নেই। খোঁজাখুঁজি করেও ওই মহিলার হদিশ মেলেনি।
মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনার পর শোরগোল পড়ে যায় মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের মালতীপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। শিশুটির বাবা আবার চাঁচল থানাতেই সিভিক ভল্যান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও রাত পর্যন্ত শিশুটির হদিশ মেলেনি, খোঁজ মেলেনি ওই মহিলারও।
চাঁচলের এসডিপিও অভিষেক মজুমদার বলেন, ‘‘মায়ের অনুমতি নিয়েই অপরিচিতা ওই মহিলা শিশুটিকে কোলে নিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। ওই মহিলার খোঁজ চলছে।’’
সোমবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল আলাদিপুরের মঞ্জুরা বিবির। তখনই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিজনেরা। এ দিন সকাল ন’টায় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। হাসপাতালে মঞ্জুরা বিবির সঙ্গে ছিলেন তার মা বুধো বেওয়া। শিশুটির পরিজনদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, দুপুর থেকেই অপরিচিতা ওই মহিলা তাদের কাছে এসে ভাব জমানোর চেষ্টা করেন। পাশের ওয়ার্ডে তার মা ভর্তি রয়েছে বলেও তিনি জানান। এরপর রাতে মাকে ফোনে কথা বলতে দেখে ফের এগিয়ে আসেন তিনি। শিশুটি কেঁদে ওঠায় তাকে কোলে তুলে নেন। ওই সময় মঞ্জুরা বিবির মা সেখানে ছিলেন না। সেই সুযোগেই শিশুটিকে নিয়ে উধাও হয়ে যান ওই মহিলা।
এই ঘটনায় অবশ্য স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতির কথা মানতে রাজি নন স্বাস্থ্যকর্তারা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘যতটুকু জেনেছি, মঞ্জুরা বিবি নিজেই অপরিচিতা ওই মহিলার কোলে শিশুকন্যাকে তুলে দিয়েছিলেন। ফলে আমরা পৃথকভাবে কোনও তদন্ত করছি না। কেননা এতে আমাদের কোনও কর্মীর গাফিলতি নেই। তবে হাসপাতালে যাতে নজরদারি বাড়ানো যায় তা দেখা হচ্ছে।’’
অপরিচিতা ওই মহিলার কোলে শিশুটিকে তুলে দেওয়ার কথা অবশ্য মানতে চায়নি পরিবার। ওই মহিলা একরকম জোর করেই শিশুটিকে কোলে নিয়েছিল বলে তাদের দাবি। শিশুটির বাবা হামেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ ভাবে যে মেয়েকে কেউ চুরি করতে পারে ভাবতেই পারছি না।’’