দিন কয়েক হল স্থানীয়েরা ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শিশু থেকে যুবক-যুবতী, সকলে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তার দায় চাপল একটি পরিবারের উপরে। ডাইনি অপবাদ দিয়ে সেই বাড়ির লোকজনকে বেধড়ক মারধর করলেন তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথা ফাটল ডাইনি অপবাদ পাওয়া বধূর। আক্রান্ত হলেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। এমনকি, মারধরের সময় আক্রমণকারীদের কেউ কেউ জখম হলেন। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের উত্তর লক্ষ্মীপুরে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ওই গ্রামে অশান্তির খবর পেয়ে রাতেই ছুটে যায় পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে কার্যত হিমসিম খেতে হয় প্রশাসনের লোকজনকে। এখনও এলাকার পরিস্থিতি থমথমে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার ৪০০-৫০০ লোক জড়ো হয়ে আক্রমণ করেন অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা মনোরঞ্জন বর্মণের বাড়ি। ওই বাড়ির বধূ প্রীতিবালা বর্মণকে মারধর করেন গ্রামবাসীরা। অস্ত্রের আঘাতে মাথা ফেটে যায় মহিলার। তাঁর বাড়ির সদস্যদেরও বেধড়ক মারধর করেছেন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা। দিলীপ বসাক নামে এক জনের ঘাড়ে অস্ত্রের কোপ পড়েছে। তাঁর হাতের আঙুল কেটে গিয়েছে বলে খবর। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
আক্রমণ এবং অশান্তির কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে গ্রামের লোকজন অসুস্থ হচ্ছেন। আশপাশের গ্রাম-সহ লক্ষ্মীপুরে বেশ কয়েক জন মারা গিয়েছেন। এ জন্য গ্রামবাসীরা এক গুণিনের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি নিদান দেন, মনোরঞ্জন বর্মণের পরিবারের জন্য গ্রামে যত অসুখ-বিসুখ। তাঁর বাড়িতে ডাইনি আছে। তার পরেই শনিবার রাতে একদল লোক জমায়েত হন উত্তর লক্ষ্মীপুরে। তাঁরা একত্রে হানা দেন মনোরঞ্জনের বাড়িতে।
আরও পড়ুন:
অভিযোগ, মনোরঞ্জনের বাড়ি ঘেরাও করার সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তার পর দা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে বর্মণ পরিবারের উপর চড়াও হন গ্রামবাসীরা। তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ বাহিনি। পুলিশি হস্তক্ষেপে ক্রমশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নিরাপত্তার স্বার্থে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র। পরিস্থিতি সামলাতে বাড়তি বাহিনি নামায় পুলিশ। কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার এএসপি কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়, এসডপিও নীলেশ শ্রীকান্ত গাইকোরা যান ঘটনাস্থলে। নতুন করে যাতে অশান্তি-না ছড়ায়, সে জন্য এলাকায় পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের বোঝানো হচ্ছে, কুসংস্কারে বিশ্বাস করে তাঁরা প্রতিবেশীকে আক্রমণ করছেন।