Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coromondel Express Accident

‘কত বার বললাম কিছু দিন পরে যা’, দুই ছেলের বাড়ি জুড়ে শুধুই দীর্ঘশ্বাস

এ দিকে, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভিন্ রাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অমিতের। অভাবি বাবার একমাত্র ছেলে অমিত দিদির বিয়ের জন্য বৈশাখ মাসে বাড়ি এসেছিলেন।

শোকার্ত বাদল ও অমিতের মা। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত বাদল ও অমিতের মা। নিজস্ব চিত্র

নীহার বিশ্বাস 
কুশমণ্ডি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ০৮:৫২
Share: Save:

টিকিট কাটার টাকা ছিল না বলে ক’টা দিন পরে যেতে বলেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু যাওয়ার জেদ চেপে বসেছিল ছেলের। নিজের মোবাইল বিক্রি করে যেতে চাইলে শেষমেশ বাধ্য হয়ে আড়াই হাজার টাকা ধার করে বাদলের (২০) হাতে দিয়েছিলেন বাবা বরুণ বিশ্বাস। নিজে টোটো চালিয়ে হাই রোড পর্যন্ত এগিয়েও দিয়েছিলেন ছেলেকে। সেই বাদল আর তাঁর প্রতিবেশী বন্ধু অমিত রায়ের (২১) নিথর দেহ ওড়িশা থেকে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সে করে রবিবার মাঝরাতে এসে পৌঁছল দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির কাঁঠালহাট গ্রামে। সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলের পরিবারের লোকেরা।

‘‘এটা যে শেষ যাওয়া হবে, বুঝিনি!’’ ভাঙাচোরা মাটির বাড়ির দরজায় বসে এই কথাই বারবার বলছিলেন ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত বাদলের বাবা বরুণ। কাঁঠালহাটের বাসিন্দা বাদলের বাড়িতে বাবা, মা ও দশম শ্রেণির পড়ুয়া ছোট ভাই রয়েছে। বাবা টোটো চালক। বন্ধু অমিত পাঁচ বছর ধরে ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন।

মাস খানেক আগে দিদি নমিতার বিয়ের জন্য বাড়ি এসেছিলেন অমিত। তার পরে, আবার ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গেই ভিন্ রাজ্যে কাজের খোঁজে যাওয়ার জেদ ধরেছিলেন বাদল। বাবা-মায়ের বারণ উপেক্ষা করেই অমিতের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ‘‘কত বার বললাম, কিছু দিন পরে যা। কিন্তু শুনল না। আমার কথা শুনলে ছেলেটা বেঁচে যেত। সবই নিয়তি।’’ ফুঁপিয়ে বললেন বাদলের মা পলি।

এ দিকে, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভিন্ রাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অমিতের। অভাবি বাবার একমাত্র ছেলে অমিত দিদির বিয়ের জন্য বৈশাখ মাসে বাড়ি এসেছিলেন। দিদির বিয়েতে খরচও করেছেন। ফের রোজগারের আশায় চেন্নাইয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে যখন বাড়িতে খবর আসে, সেই থেকে অমিতের মা কল্পনা রায় খানিক ক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। খাওয়াদাওয়া বন্ধ, বলছেন না কোনও কথাও। অমিতের দেহের সামনে বসে দিদি নমিতা বলতে থাকেন, ‘‘একটাই ভাই ছিল। আমার বিয়ের জন্য এসেছিল। ওর বিয়ে দেব, বাড়িঘর সাজাব, কত স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’’ শনিবারই অমিতের বাবা নকুল রায়, বাদলের মামা ও জামাইবাবুরা বালেশ্বরে যান। শনিবার ও রবিবার বিভিন্ন মর্গে ঘুরে রবিবার রাতে দেহ খুঁজে পান তাঁরা।

জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘কুশমণ্ডির দু’জনের দেহ রাতে এসেছে। আমরা নিয়মিত ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসন ওঁদের পাশে রয়েছে।’’

এ দিকে, গঙ্গারামপুরের লালচন্দনপুরের নিখোঁজ সুমন রায়ের দেহ সোমবার শনাক্ত করেছেন তাঁর বাবা রমাকান্ত রায়। রমাকান্ত বলেন, ‘‘প্রশাসন থেকে মৃতদের ছবি পাঠিয়েছিল, সে ছবি দেখে চিনতে পেরেছি।’’ সুমনের দেহও আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train accident Kushmandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE