আলিপুরদুয়ার: রেললাইনে চলে আসা হাতির ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু রোখার ব্যবস্থা (ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম বা আইডিএস) পরীক্ষার কাজ চলছিল। তা করতে গিয়ে বন দফতরের কুনকি হাতির হামলায় প্রাণ গেল এক জনের। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ার জেলার রাজাভাতখাওয়া স্টেশনের কাছে। সেখানে তখন উপস্থিত উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার চেতনকুমার শ্রীবাস্তব-সহ রেলের কর্তারা। মৃত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সন্দীপ চৌধুরী (৫৭) ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু রুখতে ‘আইডিএস’ চালুর দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর বাড়ি নয়ডায়। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মা পরে বলেন, “বেসরকারি সংস্থার ওই কর্মী আচমকা হাতির খুব কাছে চলে যান। আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের ডাক্তারেরা ওঁকে মৃত ঘোষণা করেন।”
রেলকর্তারা জানান, রেললাইনের ২০ মিটারের মধ্যে কোনও হাতি এলে ‘আইডিএস’-এ ধরা পড়ার কথা। তা কেমন কাজ করে পরীক্ষা করতে এ দিন রাজাভাতখাওয়া স্টেশনের কাছে মধুগাছতলায় যান রেলকর্তারা। লাইনের পাশে এক ধারে রাখা হয়েছিল বক্সার দমনপুর রেঞ্জের চেকো বিটের কুনকি হাতি ‘জোনাকি’ ও ‘মমতাজ’-কে। সেখানে ছিলেন সন্দীপ-সহ বেসরকারি সংস্থার আরও দু’-তিন জন।
দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার জংশনমুখী টুরিস্ট স্পেশাল (ভিস্তাডোম) ট্রেনটি ওই লাইন দিয়ে ফিরছিল। ট্রেনটি আসতেই বছর চল্লিশের মাদি হাতি জোনাকি সন্দীপের উপরে হামলা করে। ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে তাঁর মাথা পিষে দেয়। সন্দীপের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। রেলের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, “উনি হাতির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। তার পরেই দুর্ঘটনা।” রেল সূত্রের দাবি, সন্দীপ মোবাইলে ব্যস্ত ছিলেন। তাই হয়তো হাতিটি হামলা করবে বোঝার সময় পাননি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, দু’-এক জন ছাড়া, সেখানে উপস্থিত রেলের কাউকে সে ভাবে সন্দীপকে উদ্ধার করতে যাননি। যদিও আরপিএফের আলিপুরদুয়ার জংশনের ইনস্পেক্টর ডি পি রায় বলেন, “ওঁকে নিয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছই।” বন দফতরের কর্তারা জানান, জোনাকির এমন আচরণের কোনও ‘রেকর্ড’ নেই। সে এমন করল কেন, তা নিয়ে বনকর্তারা কিছু বলতে চাননি।
হস্তি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, “ঘটনাস্থলে না থেকে কারণ বলা সম্ভব নয়। মনে হচ্ছে, ট্রেনের শব্দে চমকে গিয়ে বা ভিড়ে বিরক্ত হয়ে কুনকি হাতিটি এমন করে থাকতে পারে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)