Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Saraswati Puja 2023

লকডাউনে হাতেখড়ি, সরস্বতী প্রতিমা গড়ছে ধনেশ্বর

লকডাউনে শিল্পীর কাজে হাতেখড়ি শুরু হয়েছিল ধনেশ্বর বর্মণের। একাদশ শ্রেণির ছাত্র ধনেশ্বর এ বার ১৫টি সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছে। লকডাউনের সময়ে হাতে অফুরন্ত সময় ছিল তার।

ধনেশ্বর বর্মণ। নিজস্ব চিত্র

ধনেশ্বর বর্মণ। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৫
Share: Save:

তুলির শেষ টান পড়েছে সরস্বতীর প্রতিমায়। বার বার তাকিয়ে সে দেখছে, সব ঠিক হয়েছে কি না। বাবাকে ডেকে বলছে, ‘‘দেখ তো, এটা আগের চেয়ে ভাল হয়েছে?’’ বাবার মুখে মুচকি হাসি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, ‘‘সুন্দর হয়েছে বাবা!’’

লকডাউনে শিল্পীর কাজে হাতেখড়ি শুরু হয়েছিল ধনেশ্বর বর্মণের। একাদশ শ্রেণির ছাত্র ধনেশ্বর এ বার ১৫টি সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছে। লকডাউনের সময়ে হাতে অফুরন্ত সময় ছিল তার। তখনই বাবার কাছে মূর্তি তৈরির পাঠ নেয়। এর আগে দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরিতে সাহায্য করেছে বাবাকে। দু’-একটি প্রতিমা নিজেও তৈরি করেছিল। এ বার প্রায় পেশাদার শিল্পী হয়ে উঠেছে। সকাল-সন্ধে পড়াশোনার ফাঁকে প্রতিমা গড়া নিয়ে মেতে থাকে সে। ধনেশ্বরের কথায়, ‘‘আমার দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করতে ভাল লাগে। টাকা আয়ও হয়, সঙ্গে মনের তৃপ্তি পাই। তাই পড়াশোনার সঙ্গে প্রতিমাও গড়ছি।’’

কোচবিহার শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ঘুঘুমারি গ্রামে নদীর চর এলাকায় ধনেশ্বরদের বাড়ি। বাবা নন্দ বর্মণ আদতে কৃষক। কয়েক বিঘা কৃষি জমি রয়েছে তাঁর। সেখানে নিয়মিত ধান-পাট চাষ করেন। তা বাজারে বিক্রিও করেন। এই কাজের মধ্যেও তরুণ বয়সে কোচবিহার শহরের পালপাড়ায় মৃৎশিল্পীর কাজে যোগ দেন তিনি। সেখানে প্রথমে সহযোগী, পরে নিজেই শিল্পী হয়ে ওঠেন। এখন বাড়ির কাছেই প্রতিমা তৈরির কারখানা গড়েছেন। কৃষিকাজের সঙ্গেই দিনরাত দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করেন। তাতে উপার্জনও অনেকটাই বেড়েছে। নন্দ জানান, তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে বড়। তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে ছোট। করোনায় যখন চার দিকে ‘লকডাউন’ শুরু হয়, তখন ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ঘুঘুমারি হাইস্কুলে পড়ত। লকডাউনে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বাড়িতেই বসে ছিল ধনেশ্বর। নন্দ বলেন, ‘‘বাড়িতে বসে ছেলের সময় কাটছিল না। তাই ওকে মাটির কাজ শেখাতে শুরু করি। সেটা ধীরে ধীরে ওর নেশায় পরিণত হয়।’’ নন্দ জানান, ওই কাজের সঙ্গে সঙ্গে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনাও করছে ধনেশ্বর।

নন্দ বলেন, ‘‘এখন তো চাকরির বাজার খুব কঠিন। মৃৎশিল্পীর কাজে ভাল উপার্জন হয়। আর পড়াশোনা জানা থাকলে, আরও ভাল শিল্পী হওয়া যায় বলে আমি মনে করি। ধনেশ্বর এখন ঠিক পথেই আছে।’’ নন্দের কারখানায় আরও দু’এক জন শিল্পী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে এখন দিনের অনেকটা সময় কারখানায় থাকে ধনেশ্বর। সে বলে, ‘‘পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে হাতের কাজও জেনে রাখা ভাল বলে মনে করি। তা হলে বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja 2023 Student idols
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE