রেল সেতু থেকে কোমরে দড়ি বেঁধে নেমে পড়ছেন ওঁরা। নীচে মাঝ আষাঢ়ের খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। ঝুঁকি যতই থাক, পাহাড়ের ধস, কাদার সঙ্গে ওই নদীই ভাসিয়ে নিয়ে আসছে জীবনের জ্বালানি। তিস্তা-সহ ডুয়ার্সের সবক’টি পাহাড়ি নদী থেকে গোটা গোটা সেই সব গাছ, গাছের বড় ডাল সংগ্রহ করতে জীবন বাজি রেখে তাই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ছেন দু’পাড়ের বাসিন্দারা।
রান্নার জ্বালানির জন্য কাঠ ধরতে এই জীবন সংগ্রামে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যুর আশঙ্কাতেও পিছ পা হচ্ছেন না কেউ। এই নিয়েই ডুয়ার্সে বিড়ম্বনায় পড়েছে প্রশাসনও। প্রতিদিনই তিস্তার গজলডোবা ব্যারাজ কিংবা জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর সড়ক এবং রেলসেতু থেকে এই ছবির দেখা মিলবে। পাহাড়ি নদী লিস, ঘিস, চেল, মূর্তি, জলঢাকা, নেওড়াতেও একই দৃশ্য। প্রতি বছরই বর্ষায় পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির ফলে ডুয়ার্সের বুক চিড়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীগুলি ফুঁসতে থাকে। উচ্চ প্রবাহে ব্যাপক ক্ষয় করে নদীর দু’পাড়ের গাছকে ভাসিয়ে নিয়ে আসে তারা।
পাহাড়ি গাছ হালকা হওয়ায় দ্রুতই ডুয়ার্সে প্রবাহিত হয়ে যায়। জল থেকে তুলে নিয়ে শুকিয়ে ফেললেই ডুয়ার্সের গাছের কাঠ থেকেও ভাল জ্বালানি মেলে এই কাঠ থেকে। শুধু বাড়ির জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতেই নয়। কাঠ নদী থেকে তুলে এনে তার পর বিক্রিও করা হচ্ছে ডুয়ার্স জুড়ে।
তবে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার খবরও মিলছে। গত সপ্তাহেই জলপাইগুড়ি লাগোয়া তিস্তা নদীতে রেলসেতুর নিচে দড়ি বেঁধে কাঠ ধরার সময় তিন ব্যক্তি ভেসে গিয়েছিলেন। পরে তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঝুঁকি আছে জেনেও নদীতে কাঠ সংগ্রহে যাবেনই বলে জানালেন গজলডোবার আশা দাস, মণিকা ঘরামিরা। ওঁদের কথায়, ‘‘জ্বালানি কাঠ নিখরচায় তোলার এমন সুযোগ হাতছাড়া করব কেন? অন্য সময় তো জ্বালানির কাঠ কিনতেই টাকা ফুরিয়ে যায়। তাই যত দিন নদীতে স্রোত আছে, তত দিন এ ভাবে কাঠ তুলতেই হবে।’’
আরেক দিকে, অন্য সময়ে এক ভ্যান জ্বালানি কাঠের দাম যেখানে ৫০০-৭০০ টাকা হয়, সেখানে নদী থেকে মেলা কাঠ বিক্রি হয় প্রতি ভ্যানে মাত্র ২০০ টাকা হিসেবে। স্বভাবতই এই ‘মরসুমি পেশা’কে ঘিরে শতাধিক মানুষের মধ্যে বাড়তি উৎসাহও রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দুর্ঘটনার তোয়াক্কা করে ঘরে বসে থাকলে তাঁদের চলবে না বলে জানান ওই বাসিন্দারা।
মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি অবশ্য এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির তদারকিতে গিয়ে একাধিক জায়গায় এই কাঠ সংগ্রহ প্রক্রিয়া দেখেছি। যে কোনও সময়ে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। দ্রুত পঞ্চায়েত স্তরে কথা বলে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy