Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পুরভোটে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ মিটছে না তৃণমূলে

ফের দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের মুখে গৌতম

প্রার্থী নিয়ে ফের দলীয় কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই তৃণমূল কর্মীরা ‘বহিরাগত’ প্রার্থীকে মানা হবে না বলে ক্ষোভ শুরু করেন। এর পরে দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে বিক্ষোভে জানাতে যান কলেজপাড়ার মন্ত্রীর বাড়ির সামনে। তবে মন্ত্রীকে বাড়ির সামনে পেয়ে গিয়ে রাস্তাতেই প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ওই কর্মীরা।

সকালে তৃণমূলকর্মীদের বিক্ষোভের পরে স্ত্রীর শুক্লাদেবীকে নিয়ে প্রচারে নেমে পড়লেন মন্ত্রী গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

সকালে তৃণমূলকর্মীদের বিক্ষোভের পরে স্ত্রীর শুক্লাদেবীকে নিয়ে প্রচারে নেমে পড়লেন মন্ত্রী গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

প্রার্থী নিয়ে ফের দলীয় কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব।

রবিবার সকালে শিলিগুড়ির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই তৃণমূল কর্মীরা ‘বহিরাগত’ প্রার্থীকে মানা হবে না বলে ক্ষোভ শুরু করেন। এর পরে দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে বিক্ষোভে জানাতে যান কলেজপাড়ার মন্ত্রীর বাড়ির সামনে। তবে মন্ত্রীকে বাড়ির সামনে পেয়ে গিয়ে রাস্তাতেই প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ওই কর্মীরা। কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে যান গৌতমবাবু। বাড়ির মোড়ের সামনে থেকে এলাকায় দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে সকলকে ডেকে নিয়ে যান গৌতমবাবু। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধিদের সঙ্গে অফিসের ভিতরে আলোচনায় বসেন। যতক্ষণ আলোচনা চলে, বাইরে দলের পতাকা নিয়েই পার্টি অফিস ঘেরাও করে রাখেন ক্ষুব্ধ কর্মীরা। তাঁদের দাবি নিয়ে ফের আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে, আধঘণ্টা পরে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়ে চলে যান। মন্ত্রীও বার হন পরে ভোট প্রচারে।

প্রার্থী তালিকা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই শিলিগুড়িতে তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল। গত শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন থেকেই তা প্রকাশ্যে রাস্তায় নেমে আসে। শুক্রবার সকালে মন্ত্রীর বাড়ির দরজায় পৌঁছে যায় প্রার্থী নিয়ে দলেরই কর্মীদের ক্ষোভ। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থী চেয়ে তৃণমূল কর্মীরা গৌতমবাবুর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ পৌঁছে যায় শিলিগুড়ির কলেজ পাড়ায় মন্ত্রীর বাড়ির সামনে।

সে দিনই দুপুরে হিলকার্ট রোডে তৃণমূলের জেলা অফিসেও আরেক দফায় শুরু হয় বিক্ষোভ।

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই পার্টি অফিসের সামনে বহু কর্মী-সমর্থকরা নেতৃত্ব বিরোধী স্লোগান স্লোগান শুরু করে দলছাড়ার ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিতে শুরু করেন। বিকেলে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলেরই অফিসে বসে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী বাছাই করার অভিযোগ তুলেছিলেন দলের ওয়ার্ড সভাপতি। অভিযোগের নিশানা ছিল গৌতমবাবুর বিরুদ্ধেই। তিনি অবশ্য টাকা লেনদেনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

গৌতমবাবু এ দিন কর্মী-সমর্থকদের একাংশের ক্ষোভের কথা স্বীকার করে নিলেও, তার ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন। মনোনয়ন পর্ব মিটে গেলে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সকলেই দলের প্রার্থীর হয়ে কাজ করবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এত বড় দল। কর্মী সমর্থকদের আবেগ তো থাকবেই। কেউ প্রার্থী হতে না পারলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে সময় যেতে দিন, দেখবেন সকলে ফের একসঙ্গে কাজ করছে।” ক্ষোভ বিক্ষোভের জেরে দলের প্রার্থী কোথাও বদলের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে গৌতমবাবুর দাবি, “ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা বেশ উপভোগ করছি। বুঝতে পারছি সকলের আমার প্রতি কতটা প্রত্যাশা রয়েছে। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হলাম।”

যদিও দলেরই নেতাদের একাংশের পাল্টা দাবি, ক্রমাগত বিক্ষোভের মুখে পড়ে, দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার অস্বস্তি এড়াতেই মন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বাভবিক থাকার চেষ্টা করছেন। বিক্ষুব্ধদের দাবিকে আবেগ বলে অগ্রাহ্য করলে ভোটের সময় বিপরীত ফল হতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। তাঁদের দাবি, প্রার্থী তালিকা তৈরির সময়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করলে এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ এড়ানো যেত। এদিন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের একাংশ কর্মী সমর্থকরাও তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলেই অভিযোগ তুলেছেন।

রবিবার, ছুটির দিন থাকায় সকালেই স্ত্রী শুক্লা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের পাড়ায় প্রচার সারতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। ১৭ নম্বর ওর্য়াডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন মন্ত্রী-পত্নি। এই ওয়ার্ডেই গৌতমবাবুর বাড়ি। সে সময়েই ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক তৃণমূল সমর্থক মন্ত্রীর বাড়ির দিকে আসছিলেন। বাড়ির সামনের মোড়ে মন্ত্রীকে দেখেই সেখানেই তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন কর্মী-সমর্থকরা। যুবক-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সব বয়সীদেরই ভিড় ছিল বিক্ষোভকারীদের মধ্যে। নিজের পাড়ায় এই বিক্ষোভে অস্বস্তিতে পড়ে মন্ত্রী সকলকে পাশের পার্টি অফিসে ডেকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। বিক্ষোভকারীরা অবশ্য সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের অভিযোগ, কোনও আলোচনা ছাড়াই ৩৬ নম্বরে একজন বহিরাগতকে প্রার্থী করা হয়েছে। গৌতমবাবুর নির্দেশেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ জানান তাঁরা। মন্ত্রী বলেন, “যা হয়েছে জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত এবং রাজ্যের অনুমতি নিয়েই হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শুনতে আলোচনায় বসব বলে জানিয়েছি।”

৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অলক ভক্ত ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর। তিনি বলেন, “দু’টি ওয়ার্ডই পাশাপাশি। আমরা সকলেই শিলিগুড়ির বাসিন্দা। দলের নির্দেশে প্রার্থী হয়েছি। কে প্রার্থী সেটা বড় কথা নয়, দলের প্রতীক-ই শেষ কথা। আশা করি সকলেই সেটা বুঝবেন।” যদিও, এ দিন বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন, ওয়ার্ডের কাউকে প্রার্থী করার দাবিতে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE