Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ধর্ষণ-খুনের বিচার চায় ধূপগুড়ি

বিচারকের গাড়ি ঘিরে ধরে ক্ষোভ

ধূপগুড়ি কাণ্ডের প্রতিবাদে এসইউসিআই কর্মী সমর্থকদের পথ অবরোধ আন্দোলনের জেরে জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালত সংলগ্ন এলাকা উত্তাল হয়ে উঠল। বৃহস্পতিবার বিচারকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন পুলিশের দেখা মেলেনি। গাড়ি থেকে নেমে অনেক চেষ্টা করেও আদালতে ঢুকতে না পেরে বিচারক ফিরে চলে যেতে বাধ্য হন। প্রায় এক ঘণ্টা আদালতের মূল ফটক সহ পাকা রাস্তা জুড়ে অবরোধের জেরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে নাকাল হতে হয় পথচারীদের।

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে বিচারকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে বিচারকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

ধূপগুড়ি কাণ্ডের প্রতিবাদে এসইউসিআই কর্মী সমর্থকদের পথ অবরোধ আন্দোলনের জেরে জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালত সংলগ্ন এলাকা উত্তাল হয়ে উঠল। বৃহস্পতিবার বিচারকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন পুলিশের দেখা মেলেনি। গাড়ি থেকে নেমে অনেক চেষ্টা করেও আদালতে ঢুকতে না পেরে বিচারক ফিরে চলে যেতে বাধ্য হন। প্রায় এক ঘণ্টা আদালতের মূল ফটক সহ পাকা রাস্তা জুড়ে অবরোধের জেরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে নাকাল হতে হয় পথচারীদের।

যদিও শহরের প্রাণকেন্দ্র দিন বাজারের রাস্তায় বিচারকের গাড়ি ঘিরে তুমুল বিক্ষোভের ঘটনার কথা জানতেন না বলে দাবি করেন জেলা পুলিশ সুপার কুনাল অগ্রবাল বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ তিনি বলেন, এমন কিছু হয়েছে বলে তো শুনিনি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

এদিন বেলা ২টা ১৫ মিনিট নাগাদ শতাধিক এসইউসিআই কর্মী সমর্থক মিছিল করে আদালতের সামনে দিনবাজার রোড অবরোধ করে। বিক্ষোভকারীরা আদালতের মূল ফটকের সামনেও দাঁড়িয়ে যান। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। বাইক নিয়ে আদালতে ঢুকতে বাধা পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান আইনজীবী সহ জরুরি কাজে আসা লোকজন। বেলা ২টা ২৫ মিনিট নাগাদ জেলা দায়রা আদালতের বিচারক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের গাড়ি রাস্তায় এসে দাঁড়াতে বিক্ষোভকারীরা হইহই করে ওঠেন। ধূপগুড়িতে কিশোরী খুনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে শুরু হয় তুমুল স্লোগান। মুহূর্তে বিচারকের গাড়ি ঘিরে নিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। ওই পরিস্থিতিতে বিচারক গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আদালতে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ঘিরে ধরে অভিযোগ জানাতে থাকেন। ধূপগুড়িতে কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে খুন করার ঘটনায় পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ধরছে এবং শাসক দলের নির্দেশে ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি চলতে থাকে স্লোগানও।

অবস্থা দেখে পথচারীরা অবাক। আশপাশের বিভিন্ন দোকান থেকে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় এসে দাঁড়ান। তখনও ঘটনাস্থলে পুলিশ নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিচারকের নিরাপত্তারক্ষীকে হিমসিম খেতে হয়। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তিনি বিচারককে গাড়িতে বসাতে চেষ্টা করেন। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা গাড়ির দরজা আগলে দাঁড়ায়। নিরাপত্তারক্ষী আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে অনুরোধ করতে থাকেন সরে দাঁড়াতে। তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেন, বিচারক লাঞ্চ সেরে ফিরছেন, অনেক কাজ আছে বলে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। বেলা ২টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত ওই পরিস্থিতি চলে। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা সরে দাঁড়ালে চালক ও নিরাপত্তারক্ষী বিচারককে গাড়িতে তুলে ফিরে চলে যান। গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পনেরো মিনিট পরে পুলিশের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘গো ব্যাক পুলিশ’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। পুলিশ কর্তারা রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে এসইউসিআই-র জেলা নেতা অমল রায় রুখে দাঁড়ান। তিনি দাবি করেন, অপরাধীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত সরে দাঁড়ানোর কোনও প্রশ্ন নেই। যদিও সোয়া তিনটা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়।

জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম আহ্বায়ক সলিল আচার্য অভিযোগ করেন, “যাঁদের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাঁদের একজনকেও পুলিশ গ্রেফতার করেনি। তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশে একই নামের অন্যজনকে ধরে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।”

সিপিএম নেতৃত্বের ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “শুরু থেকে সিপিএম মর্মান্তিক ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করছে। আমরা প্রত্যেকের কাছে আবেদন করেছি দোষীদের শাস্তির দাবি তুলুন। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে, সেখানে দলের কী আছে!” জেলা পুলিশ সুপার কুনাল অগ্রবাল সিপিএমের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “বিষয়টি রেল পুলিশ দেখছে।”

ওই ছাত্রী যে স্কুলে পড়ত, সেই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল, পারিবারিক বিবাদের কারণে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার তাই শোকসভা করে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। বুধবার আমরা শিক্ষকরা তার বাড়িতে গিয়ে পুরো ঘটনা জানি। সেখানের ঠিক হয় খুনের আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে আমাদের পথে নামতে হবে। সেই অনুযায়ী আমরা ও ছাত্রছাত্রীরা সকলে থানায় গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসি।” তাঁর দাবি, পুলিশ যে ঠিক মতো তদন্ত করছে না, তা তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে, ফের সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষকরা ধূপগুড়ি থানায় জড়ো হবেন বলে জানানো হয়েছে। ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আজ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রীর এক সহপাঠীর কথায়, “এ ভাবে ওকে যারা খুন করল, তাদের পুলিশ কেন ধরছে না বুঝতে পারছি না। খুনের কিনারা না হলে আমরা ফের থানায় আসব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE