Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপির টিকিট না পেয়ে ফের বিক্ষোভ শিলিগুড়িতে

বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মনোনয়ন জমা করার পরেও এক দলীয় প্রার্থীকে টিকিট দিলেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তার জেরেই ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই প্রার্থী সন্টু দাসের অনুগামীরা ফের বিক্ষোভ দেখালেন শিলিগুড়িতে। গত সোমবারই তিনি বিজেপি-র হয়ে মনোনয়ন জমা করেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৪৬
Share: Save:

বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মনোনয়ন জমা করার পরেও এক দলীয় প্রার্থীকে টিকিট দিলেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তার জেরেই ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই প্রার্থী সন্টু দাসের অনুগামীরা ফের বিক্ষোভ দেখালেন শিলিগুড়িতে ।

গত সোমবারই তিনি বিজেপি-র হয়ে মনোনয়ন জমা করেছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা জানতে পারে যে সমস্ত বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তেমন কোনও সংস্থায় সন্টুবাবুর স্ত্রী মীনাক্ষীদেবী এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। এর পরেই সন্টুবাবুকে বিজেপি’র তরফে টিকিট তথা প্রতীক না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।

সন্টুবাবুকে দলের তরফে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না জানতে পেরে এ দিন মনোনয়ন জমা করার কেন্দ্র তথা শিলিগুড়ি মহকুমাশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ দেখান। ওই ঘটনার পরে প্রথমে এলাকার নেতা তথা ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মনোরঞ্জন সাহা ওরফে তুফান সাহাও বিজেপি’র প্রতীক নিতে অস্বীকার করেন। তুফানবাবু বিজেপি’র জেলা কমিটির সহ সভাপতি।

তিনি ক্ষোভে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মনোনয়ন জমা করার কেন্দ্রেই প্রকাশ্যে এলাকার সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলীয় প্রতীক পাওয়ার চিঠি ছিঁড়ে ফেলেন তুফানবাবু। পরে অবশ্য বিজেপি নেতৃত্ব তাকে বুঝিয়ে দলের তরফে তাঁর প্রতীক পাওয়ার জন্য আলাদা চিঠি জমা করিয়েছেন। তাতে শুধু ৩৮ দুটি ওয়ার্ডেই বিজেপি’র কোনও প্রার্থী থাকছে না। সন্টুবাবু নির্দল হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি দলের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী দেখছেন জানিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বিশ্বপ্রিয়বাবু বলেন, “৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে যাকে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁর স্ত্রী ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থায় যুক্ত বলে আমরা পরে জানতে পেরেছি। আমরাই একমাত্র দল যারা এ ধরনের ভুঁইফোড় সংস্থার বিরুদ্ধে লড়ছি। সে কারণে ওই প্রার্থীকে দলের তরফে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। সকলকেই দলের তরফে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। তবে সন্টুবাবুর পাশের ওয়ার্ডে তো দলের প্রতীক নেওয়ার চিঠি ছিঁড়ে ফেলেছেন বলে শুনেছি। ওঁর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।”

এই ঘটার জেরে বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে দল নিয়ম মেনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান বিশ্বপ্রিয়বাবু। মঙ্গলার ৪২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপি’র টিকিট না পেয়ে রাজ্য এবং জেলা সভাপতির বিরদ্ধে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিকে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন ব্রিজকিশোর সিংহ।

সন্টুবাবু এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তাঁরা মেনে নিতে চাননি। মিণাক্ষী দেবীর দাবি, “একটি সংস্থায় এজেন্ট হিসাবে কাজ করলেও আমার বিরুদ্ধে কোথাও কোনও অভিযোগ নেই। বরং ওই সংস্থার কাছে আমি টাকা পাব। তা ছাড়া বিজেপি নেতৃত্ব সন্টুবাবুকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণাও করেছিলেন। সেই মতো টাকা খরচ করে হোর্ডিং, ব্যানার, দেওয়াল লিখন করা হয়েছে। তা ছাড়া আমাদের সামাজিক একটা সম্মান রয়েছে। বিজেপি’র জন্য সেটা নষ্ট হবে। এর পরে তো আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে? তার জন্য বিজেপি দায়ী থাকবে।”

সন্টুবাবু জানান, দল টিকিট না দিলে নির্দল হিসাবেই দাঁড়াতে হবে। সন্টুবাবুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তুফানবাবু। তিনি বলেন, “আমার দিকে তাকিয়েই সন্টুবাবু বিজেপি করছে। আমি দলের টিকিটে লড়ব উনি পারবেন না, তাই নির্দল হিসাবে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। তা ছাড়া যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ায়িয়া অন্য এক ব্যক্তিকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। তা নিয়ে আমার সঙ্গে তার বচসা হয়েছে। তার জেরেই সন্টুবাবুকে প্রার্থী করা হচ্ছে না। এমনকী ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীকেও প্রতীক না দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল।”

প্রার্থী নিয়ে বিজেপি’র অন্দরে কোন্দলে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর আরও একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন দেন।

বিজেপি-র ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে অরুণিমা বর্মনকে প্রার্থী করায় ক্ষুব্ধ বিরুদ্ধ গোষ্ঠী। তাঁরা অর্পিতা দাসকে প্রার্থী করার দাবি তোলেন। অর্পিতা দেবী এ দিন মনোয়ন জমাও করেছে। বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু জানান, ওই ওয়ার্ডে দুই জনই মনোনয়ন জমা করেছেন। যদি কোনও কারণে অরুণিমা দেবীর তা বাতিল হয় তা হলে অর্পিতাদেবী দাঁড়াবেন। অপিতাদেবী তা মানতে চাননি। তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা সন্টুবাবুদের সঙ্গে মিলে শিলিগুড়ি মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি’র টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর হয়ে অর্জুন সাহু মনোনয়ন জমা দেন।

এড়ডিএ’র শরিক হলেও কেপিপি এ দিন তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বুধারু রায়, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ঝর্ণা বর্মন এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যামল চন্দ্র রায়কে তারা প্রার্থী করেছে। কেপিপি’র জলপাইগুড়ি জেলাসভাপতি মহম্মদ হাসিবুল বলেন, “আমরা বিজেপি’র সঙ্গে রয়েছি। তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE