প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসেবে শিলিগুড়ির সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ফের একজোট হলেন শহরবাসী।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে দীনবন্ধু মঞ্চে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জন শুনানির আয়োজন উপস্থিতদের মধ্যে জনা পাঁচেক ছাড়া সকলেই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ কোনমতে আর শিলিগুড়িতে চলতে দেওয়া যাবে না বলে সওয়াল করেন। একই মঞ্চে পৃথকভাবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের ডাক দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ও মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। কয়েকজন প্লাস্টিক সামগ্রী প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ী বিরোধিতা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সিংহভাগ বর্জনের পক্ষে সায় দেন। ফলে শহরের ‘প্লাস্টিক মুক্ত’ তকমা ধরে রাখতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই শুনানির গোটা প্রক্রিয়াটাই ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। যা পাঠিয়ে দেওয়া হবে রাজ্য পরিবেশ দফতরে বলে জানানো হয়েছে পর্ষদের পক্ষ থেকে।
এ দিন মন্ত্রী বলেন, ‘‘শিলিগুড়িকে আগে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই জনশুনানি প্রয়োজন ছিল। নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে এই শুনানির রিপোর্ট পাঠানো হলে সরকারি নির্দেশ জারি করতে সুবিধা হবে। শহরকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত করার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।’’ সবার সহযোগিতা চান মেয়রও। বক্তব্যে বিগত পুরবোর্ডের উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানান তিনি। মেয়র বলেন, ‘‘কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলে প্রথম প্লাস্টিক বর্জন করে তাঁরা যে কাজ করেছিলেন, তাঁদের সমর্থন করেছিলাম রাজ্য সরকারে থাকার সুবাদে। এখন আমরা পুরবোর্ডে। চাইছি সকলে মিলে শহরে প্লাস্টিক ঢোকা ও ব্যবহারের উপরে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।’’
এদিন শহরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা প্রায় সকলেই প্লাস্টিক বর্জনের উপরে জোর দেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন, পিপলস ফর অ্যানিম্যাল, পশ্চিমবঙ্গ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম, দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের মত সংগঠন ছাড়াও বহু মানুষ, স্কুল ছাত্রীরাও প্লাস্টিক বর্জনের পক্ষে সওয়াল করেন। এদিন উপস্থিত ছিলেন, শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র রামভজন মাহাতো সহ অন্য মেয়র পারিষদেরা। ছিলেন বিরোধী তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপি কাউন্সিলররাও। ছিলেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তাপস গুপ্ত, শিলিগুড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অনিন্দ্য দাশগুপ্ত প্রমুখ।
এদিন জনতার রায়ের বিপক্ষে গিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যাতে চালু রাখা যায় তার একটা মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিলেন প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবসাকারী কিছু মানুষ। তাঁদের যুক্তি ছিল শহরে বিভিন্ন ভাবে দূষণ হচ্ছে। তাই শুধুমাত্র প্লাস্টিক বা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের উপর কোপ আসছে কেন? এমনকী বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার প্যাকেটজাত খাবার নিয়ে এসে মঞ্চে সাজিয়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেন। প্লাস্টিক নিষিদ্ধকারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, রাজীব বিহানি, আশিস চান্দোক, চিত্তরঞ্জন দাস সহ জনা পাঁচেক ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগের ডাক দেন অনিমেষ বসু, শঙ্কর কর, প্রবীর পাণ্ডারা। তাঁর নিজের ওয়ার্ডে একটিও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ঢুকতে দেবেন না বলে ঘোষণা করেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার কোর কমিটির সদস্য অরবিন্দ ঘোষ। তিনি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের মধ্যে দিয়েই পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত শুনানি চলে। অনুষ্ঠানের সভাপতি তথা পুরসভার কমিশমনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া জানান, শুনানির রিপোর্ট ও রেকর্ডিং পাঠানো হবে পরিবেশ দফতরে। তাঁরাই পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।
কংগ্রেস পুরবোর্ডের আমলে শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তৎকালীন বাম রাজ্য সরকারও পুরসভার আবেদনে সাড়া দিয়ে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ২০১৪ সালে কয়েকজন ব্যবসায়ী ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে আবেদন করেন গ্রিন ট্রাইব্যুনালে। তাতে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জন শুনানি না করেই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার ব্যাপারটিতে আপত্তি জানানো হয়। সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্যই এদিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল।