সে দিন এ ভাবেই লক্ষ্মীরানি দেওয়ানের দেহ কাঁধে চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী ও ছেলে। ফাইল চিত্র
শববাহী গাড়ির টাকা জোগাড় করতে না পারায় স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে ১২ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন ওড়িশার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাজি। ছত্তীসগঢ়ের সরগুজাতেও একই কারণে মৃত কন্যার দেহ নিয়ে ১০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন গ্রামবাসী ঈশ্বর দাস। প্রায় তেমনই এক ছবির সাক্ষী হয়েছিল জলপাইগুড়িও। গত ৫ জানুয়ারি জলপাইগুড়ির এমন ঘটনায় হইচই পড়েছিল রাজ্য জুড়ে। জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ ক্রান্তির নাগরডাঙা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিতে তিন হাজার টাকা দাবি করছিলেন হাসপাতাল চত্বরের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা। শত অনুরোধেও কাজ হয়নি। অত টাকা না থাকায় লক্ষ্মীরানি দেওয়ানের (৭২) দেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিয়েছিলেন স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান ও ছেলে রামপ্রসাদ। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, ঘটনা চোখের সামনে দেখেও সাহায্য করতে সে দিন এগিয়ে আসেননি কোনও হাসপাতাল কর্মী। উল্টে, কর্তব্যরত কর্মীদের একাংশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ছবি তুলতে।
জয়কৃষ্ণ দেওয়ানের দাবি, সে দিন প্রায় এক কিলোমিটার ওই ভাবে হাঁটতে হয়েছিল। তত ক্ষণে স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শববাহী গাড়ি। শেষ পর্যন্ত সে গাড়িতেই বাড়ি পৌঁছেছিল দেহ। এর পরে এই ঘটনাকে ঘিরে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের শাসক দলের সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদককে গ্রেফতার করে। পরে আদালতের নির্দেশে নিঃশর্ত জামিনে ছাড়া পান সম্পাদক।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে না পাওয়ায় পাঁচ মাসের সন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে ভরে বাসে ফিরে যাওয়ার ঘটনা শুনে শনিবার সন্ধ্যায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন জয়কৃষ্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘গরিব মানুষের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন বার বার এমন হয়রানির শিকার হতে হবে? আমার স্ত্রীর দেহ কাঁধে তুলে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা চেয়ে। রাজ্য সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকেও প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া কেটে নেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এই আর্জি জানাব।’’জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর, এমন অমানবিক ঘটনার পর থেকেজেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাসপাতাল থেকে গরিব মানুষের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিডিওদের সহযোগিতায় সরকারি উদ্যোগেই হাসপাতাল থেকে দেহ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy