প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রায় ২৪ ঘণ্টার লড়াইয়ে প্রাণ হারাল একটি পুরুষ মাকনা হাতি। বন দফতর সূত্রে খবর, একটি দাঁতাল হাতির সঙ্গে তার লড়াই বেঁধেছিল। প্রাথমিক অনুমান, বাইরে থেকে ঢুকে সম্ভবত সেই এলাকায় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল মাকনাটি। সঙ্গিনীর খোঁজেও দু’টি প্রাণীর লড়াই হতে পারে। রবিবার কার্শিয়াং ডিভিশনের তরাইয়ের বাগডোগরা জঙ্গল থেকে ওই মাকনা হাতির দেহ উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগের কার্শিয়াং ডিভিশনের ডিএফও দেবেশ পান্ডে বলেন, ‘‘মাকনা হাতিটি গুরুতর জখম হয়েছিল। তবে চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি। হাতিটির দেহ ময়না তদন্তের পরে ঘটনাস্থলেই শেষকৃত্য হবে।’’ বন দফতর সূত্রের খবর, বাগডোগরার জঙ্গলে নজরদারি চালানোর সময়ে শনিবার থেকেই দু’টি হাতির লড়াইয়ের শব্দ পেয়েছিলেন কয়েক জন বনকর্মী। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জনও একই দাবি করেছেন। সেই সময়ে হাতিদের কাছে ঘেঁষা বিপজ্জনক। এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে বনকর্মীরা মাকনা হাতির দেহ দেখতে পান।
কার্শিয়াংয়ের এডিএফও রাহুলদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু দিন পরেই হাতিদের প্রজননের সময় শুরু হবে। তার আগে সঙ্গিনীর খোঁজ শুরু হয়। তারা দল তৈরির চেষ্টা করে। মাকনাটি বাইরের কোনও জঙ্গল থেকে বাগডোগরায় ঢুকে হয়তো সে রকমই চেষ্টা করেছিল। তার জেরেই বয়সে কিছুটা বড় দাঁতালের সঙ্গে তার লড়াই হতে পারে।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, মৃত মাকনাটির বয়স ৩৫ বছরের বেশি হবে। দাঁতালটির বয়স সেটির থেকে কিছুটা বেশি হতে পারে। পাশেই বৈকণ্ঠপুর, মহানন্দা অভয়ারণ্য। মাকনা হাতিটি সেখান থেকে থেকে বাগডোগরা জঙ্গলে ঢুকতে পারে। বাগডোগরা থেকে কমবেশি ২০ কিলোমিটারের মধ্যেই নেপাল। মাঝেমধ্যে মেচি নদী পার করে কার্শিয়াংয়ের জঙ্গলে হাতির দল ঢুকে পড়ে। মৃত মাকনাটি নেপাল থেকেও বাগডোগরায় ঢুকতে পারে। তার শুঁড়, গলা-সহ শরীরের নানা অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেগুলি দাঁতালের হানার ক্ষতচিহ্ন বলেই মনে করছেন বনকর্মীরা।
বন দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কার্শিয়াং ডিভিশনে ৫০টির বেশি হাতি রয়েছে। বিভিন্ন জঙ্গলে তারা ভাগ হয়ে এলাকা ‘শাসন’ করে। কোনও দলে একটি বা দু’টি পুরুষ হাতি থাকতে পারে। বাকিগুলির বেশিরভাগ মাদী হাতি। দলগুলির শাসন করে থাকে ওই পুরুষ হাতি।
কোনও পুরুষ হাতি দল তৈরি করতে না পারলে, নিজেদের মতো তিন-চারটি এক সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু মাদী হাতির দলের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা তারা ছাড়ে না। মাকনা হাতিটি সে রকমই কিছু করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)