Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গরুমারায় ফের উদ্ধার গন্ডারের মৃতদেহ

অসমে ধৃত এক চোরা শিকারীকে জি়জ্ঞাসাবাদ করে ফের দু’টি গন্ডারের দেহ উদ্ধার হল গরুমারার গভীর জঙ্গল থেকে। কোনও গন্ডারেরই খড়গ পায়নি বনকর্মীরা।

তদন্ত: গন্ডারের মৃত্যু নিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

তদন্ত: গন্ডারের মৃত্যু নিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৩
Share: Save:

অসমে ধৃত এক চোরা শিকারীকে জি়জ্ঞাসাবাদ করে ফের দু’টি গন্ডারের দেহ উদ্ধার হল গরুমারার গভীর জঙ্গল থেকে। কোনও গন্ডারেরই খড়গ পায়নি বনকর্মীরা। চোরাশিকারিরাই গন্ডার দু’টিকে মেরে খড়্গ কেটেছে বলে বন দফতরের প্রাথমিক সন্দেহ। একই সঙ্গে দু’টি গন্ডারের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় গরুমারার নিরাপত্তা ফের প্রশ্নের মুখে।

বৃহস্পতিবার জঙ্গল থেকে মেলে একটি গন্ডারের পচাগলা দেহ। তারপরে তল্লাশি চালাতে গিয়েই দ্বিতীয় দেহটির হদিশ মেলে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গরুমারার জঙ্গলে চোরাশিকারিরা ঢুকে গুলি চালিয়েছিল। সে সময়ে একটি গন্ডার জখমও হয়। তার পরেই কোনও সময়ে চোরাশিকারিদের দল ঢুকে গন্ডারটিকে নিকেশ করে। খড়্গহীন সেই গন্ডারটির পচাগলা দেহই উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয় গন্ডারটির দেহের ময়নাতদন্ত করে মাথা থেকে গুলিও মিলেছে। জঙ্গলে এই গন্ডারটি কানকাটা নামে পরিচিত ছিল বলে জানা গিয়েছে।

শুক্রবার বিএসএফের থেকে প্রশিক্ষিত কুকুর এনে যেখানে গণ্ডারের দেহ উদ্ধার হয়েছিল তার চারপাশে তল্লাশি চালানো হয়। তখনই মেলে খালি জলের বোতল খাবারের প্যাকেট। গভীর জঙ্গলে জলের বোতল- খাবারের প্যাকেট আসার কথা নয়। তাই চোরাশিকারির দল গন্ডার খুনের আগে বা পরে জঙ্গলে ভোজও খেয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরমণ্ডলের বনপাল(বন্যপ্রাণী) সুমিতা ঘটক বলেন,‘‘নিজেদের লোক জড়িত না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। কারও গাফিলতি প্রমাণ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

নজরদারির কাজে গাফিলতির অভিযোগে বনকর্মী-আধিকারিকদের কয়েকজনের শাস্তির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। কলকাতায় রয়েছি। ফিরে গরুমারায় যাব।’’

এ দিন দু’টি গন্ডারের মৃত্যুর খবর চাউর হতেই ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বনকর্তাদের। দফতরের দাবি গন্ডার শিকারী সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাতেই ডিগলা রায়, হরেন রায়, খলিল রহমান এবং বিমল রায় নামে চারজনকে পাকড়াও করে বন দফতর। এদের মধ্যে হরেন ও ডিগলার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে গরুমারার ধূপঝোড়া বিটে একটি গন্ডারকে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। দু’জনে বর্তমানে জামিনে রয়েছে। গন্ডার খুনে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ডিগলা রায় বন দফতরে ১০০ দিনের কাজ করে বলে জানা গিয়েছে। তবে চারজনই এ দিন দাবি করেছে, তারা নির্দোষ। গন্ডার খুনের বিষয়ে কিছুই জানে না।

১৪ মার্চ অসমের কামরূপ জেলার বাইহাটা চারিয়ালিতে একটি বাসের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় তিন শিকারি মারা যায়। গাড়িতে মেলে একটি গন্ডারের খড়্গ। রাইফেল ও ঘুম পাড়ানি ওষুধও মেলে। গাড়ির এক আরোহী গুরুতর জখম হলেও প্রাণে বাঁচে। তার নাম জেকব। প্রথমে ভাবা হয়েছিল কাজিরাঙা বা ওরাং জাতীয় উদ্যানে গন্ডারটি মারা হয়েছিল। কিন্তু পরে জেকবের জ্ঞান ফিরলে জানা যায় উত্তরবঙ্গের গরুমারা জাতীয় উদ্যানে একাধিক গন্ডার শিকার করেছে তারা। শুধু তাই নয়, নজরদারি কম থাকার সুযোগ নিয়ে গন্ডারদের দেহ পুঁতেও ফেলে। জেকবের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গরুমারায় তল্লাশি শুরু হয়। নেতৃত্ব দেন খোদ প্রধান মুখ্য বনপাল প্রদীপ ব্যাস ও অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল আর পি সাইনি। তখনই একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী গন্ডারের পুঁতে রাখা দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয় কারা শিকারচক্রে জড়িত জানতে চলছে তদন্ত।

পরিবেশ কর্মী রাজা রাউতের কথায়, ‘‘যেমন অভিযোগ উঠেছে তা সত্যি হলে বলতে হবে গরুমারায় কোনও প্রাণীই আর নিরাপদ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Gorumara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE