Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছুটির দিনে ভোট ভিক্ষা অশোক, গৌতমের

ছুটির মেজাজ যেন উধাও! রবিবার দিনভর শহরবাসীদের অনেককেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ‘অতিথি’ অ্যাপায়নে ব্যস্ত থাকতে হল। সৌজন্যে পুরভোট।

রবিবার শিলিগুড়িতে প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য।

রবিবার শিলিগুড়িতে প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০২:০৮
Share: Save:

ছুটির মেজাজ যেন উধাও! রবিবার দিনভর শহরবাসীদের অনেককেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ‘অতিথি’ অ্যাপায়নে ব্যস্ত থাকতে হল। সৌজন্যে পুরভোট।

একদিকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য দোরগোড়ায় হাজির। হাসি মুখে ভোট চাইছেন। তার উপরে তাঁকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছে বামেরা। ফলে, যেখানেই অশোকবাবু যাচ্ছেন, সেখানেই তিনি মেয়র হলে কী কী কাজ করে দিতে হবে সেটাও শুনিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। অত্যুত্‌সাহীরা কেউ কেউ তো তাঁকে আগাম অভিনন্দন জানিয়ে দিচ্ছেন।

একই সময়ে অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সকালবেলাতেই ঘরের দরজায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে পেয়ে পরিষেবা সংক্রান্ত নানা নালিশ জানাচ্ছেন। কেউ আবার ‘সুন্দর রাস্তা’ তৈরির জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াতে চাইলেও দল না চাওয়ায় তিনি নিজে দাঁড়াতে পারেননি। তবে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্ত্রী শুক্লা দেবী। শুক্লা দেবী অবশ্য এ দিন সকালে প্রচারে যাননি। তাঁর হয়ে ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইলেন মন্ত্রী গৌতমবাবুই। স্ত্রীর হয়ে বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়া, প্রচার মূলত সারছেন গৌতমবাবু নিজেই। এ দিন সকালেও ঘন্টা দুয়েক ওয়ার্ডে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়লেন তিনি। কখনও সিঁড়ি ভেঙে উঠে এক তলা থেকে চার তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের কাছে ভোট চাইলেন স্ত্রীর জন্য। কখনও ঘরে ঢুকে, কখনও দরজায় দাঁড়িয়েই ‘দেখবেন। স্ত্রী প্রার্থী হয়েছে। এবার ভোটটা কিন্তু ওঁকে দিতে হবে’ বলে অনুরোধ জানালেন। আবার কখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে প্রচার সারলেন। মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কয়েকজন ওয়ার্ডের নিকাশি সমস্যা, পানীয় জলের সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। মন্ত্রীও তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে প্রচারে প্রার্থীর দেখা বাসিন্দারা কমই পাচ্ছেন বলে জানান। গৌতমবাবু বলেন, “অসুস্থতার জন্য স্ত্রী বাড়িতে রয়েছে। এ দিন বার হতে পারেননি। তবে ওয়ার্ডে বিভিন্ন বাড়িতে প্রচারে নিজেও যাচ্ছেন।” তৃণমূল সূত্রে খবর, শুক্লা দেবী এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ভোট চাইতে বারবার হয়ত যেতে পারবেন না। তবে অন্তত এক বার যাতে যান তা জানানো হয়েছে। মন্ত্রী এবং দলীয় কর্মীরা আরও কয়েকবার প্রচার চালিয়ে আসবেন।

অশোকবাবু যে ওয়ার্ডে থাকেন, সেই ২০ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি জাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি সেখান থেকে দাঁড়াননি। তিনি প্রার্থী হয়েছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। গত শনিবারই দলের তরফে তাঁকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন সকালে প্রচারে বেরিয়ে সাধারণ বাসিন্দাদের সমস্যার কথাও শুনলেন অশোকবাবু। প্রথমে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে সেরে, নিজের বাড়ির এলাকা ২০ নম্বর ওয়ার্ডে পদযাত্রা করেন। পরে ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন তিনি।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের যাদবপল্লি এলাকায় অশোকবাবুকে দেখেই আলি হোসেন বলেন, “স্যার শুনলাম আপনি না কি মেয়র হবেন?” প্রশ্ন শুনে অশোকবাবু হেসে ফেলতেই এলাকার বিভিন্ন সমস্যা কথা তুলে ধরেন আলি হোসেন সহ অন্যরা। আলি হোসেন বলেন, “এই এলাকায় নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার হয় না। বস্তিতে অনেক বাড়িতেই পাকা শৌচাগার নেই। সব নোংরা নর্দমনায় এসে পড়ে। দুর্গন্ধে থাকা যায় না। কিছু করুন।” সকালে বিবেকানন্দ রোড থেকে পদযাত্রা শুরু করেন অশোকবাবু। কয়লা ডিপো লাগোয়া বস্তির ঘিঞ্জি রাস্তায় প্রচার মিছিল হয়। বিভিন্ন বাড়ি অথবা মোড়ের জটলা দেখলেই অশোকবাবু এগিয়ে গিয়ে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কারও কাছ থেকে আবার বিশ্বকাপ ফাইনালের স্কোরও জেনেছেন। রমারানি যাদব নামে এক বৃদ্ধা অশোকবাবুর কাছে ভাতা নিয়ে অভিযোগ জানান। অশোকবাবুও কর্মীদের ডেকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, “মাসিমা অনেক দিনের সমর্থক। এখনও ভোলেননি।”

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE