কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় সিম কার্ড ‘ক্লোন’ করা বা কারও নামে ‘ভুয়ো’ সিম কার্ড তৈরি করার অভিযোগ সামনে এসেছে। এমন ঘটনা রাজ্যে নতুন নয় ঠিকই, কিন্তু অপরাধের জগতে নতুন করে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা এতে জড়িয়ে পড়ায় চিন্তা বেড়েছে। ভবিষ্যতে এমন রুখতে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। না হলে দুষ্কৃতীদের কবল থেকে উত্তরবঙ্গের মানুষ সহজে বাঁচবেন না।
কী ভাবে জাল করা হচ্ছে সিম কার্ড?
মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে নথি জমা করে আমরা সিম কার্ড সংগ্রহ করি। কিন্তু সেই নথির ‘কপি’ ফের জমা দিয়ে অন্য নম্বরের সিম কার্ড ‘ইস্যু’ করা হচ্ছে। সিম কার্ড ‘ক্লোন’ও হচ্ছে। সিম কার্ড নেওয়ার সময় যে নথিপত্রগুলি পরিষেবা সংস্থার এজেন্ট এসে সংগ্রহ করছেন, সেগুলি যে কোনও সময় ‘ফটোকপি’ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তার মধ্যে জন্মতারিখ, ই-মেল আইডি, বাবার নাম, ঠিকানার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকছে। সে সবের মাধ্যমে নতুন সিম কার্ডও বেরিয়ে যাচ্ছে। পরে সেই সিম কার্ডগুলি কখনও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার জেরে সাধারণ মানুষও কখনও থানা-পুলিশের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রশ্ন হল, এ সব থেকে বাঁচার উপায় কী?
কেন্দ্রীয় সম্প্রচার মন্ত্রকের ওয়েব পোর্টাল, https://tafcop.sancharsaathi.gov.in/telecomUser/–এ গিয়ে দেখতে হবে ব্যবহারকারীর নামে কতগুলি মোবাইল নম্বর চালু রয়েছে। যে মোবাইল নম্বর তিনি নিজে ব্যবহার করেন, সেটি বাদ দিয়ে বাকি নম্বরগুলি ‘চেকবক্স অন’ করে ‘ব্লক’ করে দিলে ভুয়ো নথি দিয়ে চালু রাখা সিম বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের অনেকের কাছেই জটিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের ‘সাইবার ক্রাইমে’ যোগাযোগ করা দরকার।
পাশাপাশি ফোনে হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন রকম ওটিপি আসা, অনলাইন অর্ডার না করলেও কোম্পানির ফোন আসা, ভুতুড়ে এসএমএস, ব্যাঙ্ক থেকে হঠাৎ টাকা কেটে যাওয়ার মতো ঘটনাই সিম কার্ড ‘ক্লোন’ হওয়ার ইঙ্গিত। সে ক্ষেত্রে অবিলম্বে সাইবার ক্রাইম, মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এবং ব্যাঙ্কে যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করতে হবে। সিম পাল্টে নিতে হবে। ‘ক্লোন’ থেকে বাঁচতে ফোনের আইএমইআই নম্বর গোপন রাখতে হবে। পাবলিক (স্টেশন, মল, রেস্তোরাঁ) ওয়াই-ফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। ফোন দোকানে সারাতে দিলে সিম কার্ড খুলে দিতে হবে।
জাল সিম ব্যবহার করে অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। অভিযোগ হলে তবে তদন্ত হচ্ছে। অভিযোগ হওয়ার আগে পর্যন্ত বা অপরাধে কোনও সাধারণ মানুষের সিম ব্যবহার হওয়ার আগে পর্যন্ত গোপনে অনেকের সিম কার্ড ‘ক্লোন’ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। সরকারি ‘এম আধার ওয়েবসাইট’ থেকে ‘মাস্কড আধার ডাউনলোড’ করে তা সমস্ত লেনদেনে ব্যবহার করা উচিত। চেনা দোকান থেকেই নথি ফটোকপি করানোর চেষ্টা করতে হবে।
কারণ, সচেতনতাই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল অস্ত্র।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)