Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবাদীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পাড়া

চাকরি ছিল আর মাত্র তিন বছর। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার হোমগার্ড নিহত ভবেশচন্দ্র দাসকে শহরের বাসস্ট্যান্ড, কখনও চকভবানী এলাকার থানা মোড়ে ট্রাফিক সামলাতে দেখা যেত। সহকর্মী এবং এলাকায় শান্ত স্বভাবের মানুষ বলে তিনি পরিচিত ছিলেন। কলোনিতে অন্যায় এবং অসামাজিক কাজকর্ম দেখলে প্রতিবাদ জানাতেন ভবেশবাবু।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভবেশচন্দ্র দাসের পরিবারের লোকজন। ছবি: অমিত মোহান্ত।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভবেশচন্দ্র দাসের পরিবারের লোকজন। ছবি: অমিত মোহান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share: Save:

চাকরি ছিল আর মাত্র তিন বছর। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার হোমগার্ড নিহত ভবেশচন্দ্র দাসকে শহরের বাসস্ট্যান্ড, কখনও চকভবানী এলাকার থানা মোড়ে ট্রাফিক সামলাতে দেখা যেত। সহকর্মী এবং এলাকায় শান্ত স্বভাবের মানুষ বলে তিনি পরিচিত ছিলেন। কলোনিতে অন্যায় এবং অসামাজিক কাজকর্ম দেখলে প্রতিবাদ জানাতেন ভবেশবাবু। সে কারণেই শনিবার রাতের গণ্ডগোল। বেশ কিছু দিন থেকে তিনি হার্টের অসুখে ভুগছিলেন বলে আত্মীয়ের সূত্রে জানা গিয়েছে। গোলমালের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে এ দিন রাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন।

জেলা পুলিশ সুপার বলেন, পড়ে গিয়ে ভবেশবাবু মাথার পিছনে আঘাত পান। তার আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তবে প্রতিবেশী অভিযুক্ত প্রাণকৃষ্ণ দাস অধিকারীদের উন্মত্ত আচরণ ও তাঁদের মারমুখী হয়ে চড়াও হওয়ার জেরেই ভবেশবাবুর অকালমৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের একাংশও মনে করছে। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাও একই দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় মদ বিক্রি সহ নানা অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করতেন বলে কলোনির কতিপয় লোকজনের কাছে তিনি ছিলেন অপছন্দের মানুষ। ঘটনাচক্রে ভবেশবাবুকে অনিচ্ছাকৃত খুনে অভিযুক্ত ধৃত প্রাণকৃষ্ণবাবুর বিরুদ্ধে তাঁর চায়ের দোকানে সন্ধ্যা হতেই দেশি মদের ঠেক শুরু হত বলে অভিযোগ। তারও প্রতিবাদ করেছিলেন ভবেশবাবু।

অবশ্য ধৃত প্রাণকৃষ্ণবাবু তাঁর চা বিক্রির দোকানের ভিতরে মদ বিক্রির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে লাগোয়া ভবেশবাবুর ভাড়া দেওয়া মুদির দোকানের পাশে আবর্জনার সঙ্গে ভাঙা মদের বোতল ছড়িয়ে থাকতে দেখে প্রতিবাদে সরব ছিলেন ভবেশবাবু। শনিবার রাতে শহরের এ কে গোপালন কলোনিতে ওই নোংরা ফেলা নিয়ে ভবেশবাবুর আপত্তির জেরে মদ্যপ প্রাণকৃষ্ণবাবুরা চড়াও হন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে মৃত্যু হয়েছে ভবেশবাবুর (৫৭)।

অভিযুক্ত প্রাণকৃষ্ণবাবু এবং তার দুই ছেলে রাজা ও পরাণ দাসের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের (৩০৪ ধারা) মামলা দায়ের করে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। তবে ধৃত প্রাণকৃষ্ণবাবু ও তার দুই ছেলে এ দিন থানায় বসে মারধোরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রাণকৃষ্ণবাবুর দাবি, ‘‘ভবেশবাবুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। মারধর কিংবা ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।’’

অবশ্য নিহতের ভাগ্নে সুভাষ ঘোষের দাবি, ‘‘প্রাণকৃষ্ণবাবুরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে মামাকে ধাক্কা দিলে পড়ে গিয়ে তিনি জ্ঞান হারান। এরপর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর তিনি মারা যান।’’ নিহত গোমগার্ডের বাড়ির লোকেদের তরফে অভিযুক্ত প্রাণকৃষ্ণবাবুর পরিবারের ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এ কে গোপালন কলোনি এলাকায় রাস্তার ধারে প্রাণকৃষ্ণবাবু এবং হোমগার্ড ভবেশবাবুর পাশাপাশি দুটি বাড়ি। ভবেশবাবু দোকান ঘরটি ভাড়া দেন। প্রাণকৃষ্ণবাবুর চায়ের দোকান থেকে ময়লা আবর্জনা এনে ভবেশবাবুর ভাড়া দেওয়া দোকানের সামনে ফেলা হয় বলে অভিযোগকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন থেকে দু’পক্ষের বিবাদ লেগেছিল। তা ছাড়া অভিযুক্ত প্রাণকৃষ্ণবাবু চায়ের দোকানে মদের ঠেক বসাতেন বলে তা নিয়ে হোমগার্ড ভবেশবাবু হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার জেরে এত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে ভাবতে পারছেন না ভবেশবাবুর স্ত্রী রঞ্জুদেবী। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর সামান্য রোজগার থেকে কষ্ট করে দুটো মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই।’’ কী করে চলবে, তা ভেবে দিশাহারা হয়ে কেঁদে চলেছেন রঞ্জুদেবী।

এ দিন দিনভর এ কে গোপালন কলোনির পরিবেশ ছিল থমথমে। ভবেশবাবুর মৃত্যুতে পড়শিদের অধিকাংশ শোকস্তব্ধ। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বিবাহিত দুই মেয়ে চলে এসেছেন। বাড়িতে কান্নার রোল। পাশে ধৃত প্রাণকৃষ্ণবাবুর চায়ের দোকানের ঝাপ বন্ধ। বাড়ির তিন পুরুষ সদস্য গ্রেফতারের ভয়ে সিটিয়ে আছেন প্রাণকৃষ্ণের বৃদ্ধ বাবা অদ্বৈতবাবু। তার বক্তব্য, ‘‘কী করে এমন ঘটল কিছুই জানি না। আমাদের দোষ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhabesh Chandra Das Home Guard Balurghat Mourns
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE