সাজ: ভোটের জন্য সেজেছে এলাকা। নানা দলের পতাকা রাস্তার ধারের দোকানে। আলিপুরদুয়ারের ভেলুরডাবরিতে। ছবি: নারায়ণ দে
যে সব আসনের ফলাফল ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে, সেগুলোর দিকেই আজ, সোমবার প্রশাসনের নজর বেশি থাকবে। বিরোধীরাও যেমন সেই আসনগুলোকে অনেক সময় ‘পাখির চোখ’ করেছে, তেমনই শাসকদলও ওই আসনগুলোর দিকে কড়া দৃষ্টি রেখেছে। ওই আসনগুলো শাসক দলেরই কব্জায় থাকবে কি না, তার উত্তর মিলবে সোমবার রাতে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা বেশিরভাগ আসনই তৃণমূলের দখলে। নতুন করে এক দিনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার কথা ঘোষণা হওয়ার পরে আলিপুরদুয়ারে সেই আসনগুলিতে প্রার্থী খুজে পেতে রীতিমত হিমশিম অবস্থা বিরোধী দলগুলির৷ শেষ পর্যন্ত ওই আসনগুলির ক’টিতে তারা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয়ে জেলার প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারাই।
এই জেলার জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৯৯টি আসনের মধ্যে ৩০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল৷ এর মধ্যে আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে নয়টি আসনের সব ক’টিতেই তাঁরা জয়ী হয়েছেন৷ পঞ্চায়েত সমিতির ১৮৮টি আসনের মধ্যে ৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন শাসক দলের প্রার্থীরা৷
বিরোধীরা শাসকদলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছেন৷ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত রায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের একতরফা মনোনয়ন জমা পড়া আসনগুলিতে, বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের আসনগুলোতে আমরা যাঁদের প্রার্থী করব বলে ঠিক করেছিলাম, তাঁদের বাড়ি থেকেই বের হতে দিচ্ছে না শাসকদল৷ ফলে আদৌ তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন কি না তা বুঝতে পারছি না৷’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার ও আরএসপির জেলা সম্পাদক সুনীল বণিকেরও একই অভিযোগ।
তৃণমূল সব অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। যাঁদের দাঁড় করানো হয়েছে, তাঁদের অনেকেও ভুয়ো প্রার্থী। তাই অনেককে এলাকাতে দেখাও যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য নতুন একটি দিনও বিরোধীরা পেয়েছেন। এখন সন্ত্রাসের অভিযোগ না তুললে বিরোধীদের মুপখ রক্ষা হবে কী করে?
বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ, শাসক দল সন্ত্রাস তো করছেন, সেই সঙ্গে প্রশাসনকেও পাশে পেয়েছে। পুলিশ পক্ষপাত করছে। কোনও ঘটনা ঘটলেই বিরোধীদের গ্রেফতার করছে। শাসক দলকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ধরা হলেও জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থাতে কেউ প্রার্থী হতে চাইবেন কেন? তিনি তো ভয় পাচ্ছেন।
যে কারণেই বেশ কিছু আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন বলে বিরোধীদের দাবি। কোচবিহার জেলা পরিষদে মোট আসন ৩৩। তার মধ্যে তৃণমূল ৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ৩৬৬টি। তার মধ্যে ৭৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ১২৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৯৬৬টি। তার মধ্যে ৪৭১ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল।
উত্তর দিনাজপুরে চোপড়ায় বিরোধীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। কংগ্রেস ব্লক সভাপতি অশোক রায় বলেন, ‘‘এলাকার সন্ত্রাসে কর্মীরা আতঙ্কিত। প্রশাসনকে বলেও লাভ হয়নি। তবে মনোনয়নের সুযোগ মিলেছে মনোনয়ন জমা দেবই।’’
চোপড়ার পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা জাকির আবেদিনের পাল্টা দাবি, ‘‘এলাকা শান্তিপূর্ণ রয়েছে। বিরোধীদের পায়ের তলার মাটি নেই। তাই আমাদের বদনাম করছে।’’ অশোকবাবু দাবি করেছেন, প্রয়োজনে দল বেঁধে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে। চোপড়াতে পরিস্থিতি বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত। তাই আজ, সোমবার পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রেখেছে প্রশাসন।
মালদহেও পরিস্থিতি অনেকটা কাছাকাছি। মালদহের বিরোধী শিবির একদিন সময় পেয়ে ওই প্রার্থী দিতে তেড়েফুঁড়ে নেমেছে। থেমে নেই শাসক শিবিরও। তবে বিরোধীদের ঠেকাতে নয়, গোষ্ঠী কোন্দলে নতুন করে মনোনয়ন দাখিল ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলার তৃণমূলের নেতারা। ফলে মনোনয়ন নিয়ে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে মালদহ রাজনীতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy