আহত কর্মীকে দেখতে বেলায় হাসপাতালে অহলুওয়ালিয়া।
দুপুর গড়ালেই শেষ পুরভোটের প্রচার। তাই বৃহস্পতিবার সাত সকালেই পথে নামেন নেতা মন্ত্রীরা। অলি-গলি থেকে রাজপথ দিনভরই চষে বেড়ালেন তাঁরা। সকাল আটটা থেকেই শুরু হয়ে যায় রোড-শো, পদযাত্রা, পথসভা। তবে বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ শেষ প্রচারের সকালটা বাড়িতেই কাটালেন। সাংসদের নিজের দাবি, সব ওয়ার্ডেই একাধিকবার তিনি প্রচার চালিয়েছেন। শেষ দিনে তাই প্রচার কর্মসূচি রাখেননি। যদিও, দলের একটি সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার সকালে টানা চারঘণ্টা বাড়িতে বসে একটির পর একটি বৈঠক করেছেন তিনি। সেই বৈঠকে এনডিএ-এর বিভিন্ন শরিক দলের শীর্ষ স্তরের নেতা থেকে কর্মীরা যেমন ছিলেন, তেমনিই ছিলেন শহরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পদাধিকারিরাও ছিলেন।
কেপিপি এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এনডিএ-র শরিক। শিলিগুড়ির বেশ কিছু ওয়ার্ডে এই দলের সমর্থকরাও রয়েছে। লোকসভা ভোটে এই দুই দলের ভোট নিজেদের বাক্সে এসেছিল বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। লোকসভা ভোটের নিরিখে শিলিগুড়ি পুরভোটে ২১টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। সে সময়ে ‘মোদী’ হাওয়ার সঙ্গে জোটসঙ্গীদের অবদানও কম ছিল না বলে দলের নেতাদের দাবি। পুরসভাতেও সেই ‘ভোট’ ধরে রাখতে শেষ প্রচারের দিন সকাল থেকে সাংসদ বিভিন্ন সংগঠন এবং নেতাদের নিয়ে বৈঠক সেরে রেখেছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার কথায়, ‘‘বেশ কিছু ঘরোয়া বৈঠক হয়েছে। তাতে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।’’
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ শহর লাগোয়া একটি আবাসনের বাড়ি থেকে বের হন সাংসদ। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের ভর্তি ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে যান তিনি। বুধবার শাসক দলের দুষ্কৃতীরা চৈতালি দেবীর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সংযোজিত এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে যান সাংসদ। ওই এলাকাগুলিতে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন কর্মীরা। কোনও বুথে গোলমাল শুরু হলে কী করণীয় তা জানিয়েছে সাংসদ। কর্মী সমর্থকদের নিজের ফোন নম্বর দিয়ে কোথাও গোলমাল হলেই, মোবাইলের ‘হোয়াটস অ্যাপ’ অ্যাপলিকেশনে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কোনও রকম আতঙ্কে ভুগে দলীয় কর্মীরা যাতে ভোটের দিন ‘বসে’ না পড়েন, সে কারণেই তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে কর্মী সমর্থকদের ‘চাঙ্গা’ করেছেন বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে। এ দিন টিকিয়া পাড়া লাগোয়া একটি এলাকায় কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কাউকে ভয় দেখাই না। তবে আমরা ভয়ও পাই না। গণতন্ত্রের উপর হামলা হলে সেটা রুখে দিতে পারি।’’
সপ্তাহখানেক আগে থেকে অহলুওয়ালিয়া শিলিগুড়িতে এসে পুরভোটে দলের প্রচারের হাল ধরেছেন। প্রার্থী বাছাই নিয়ে নানা বির্তকে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ‘হতাশা’ তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ। সে সময় সাংসদ কেন শিলিগুড়ি থেকে দূরে সরে রয়েছেন তা নিয়ে কর্মীদের একাংশের মধ্যেই ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। সেই ক্ষোভ মেটাতে আসরে নামেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে জনসংযোগ করেছেন, দুপুরে বিধানমার্কেটের ব্যস্ত সব্জি বাজারে ঘুরেছেন। সেই সঙ্গে এক একটি ওয়ার্ডে একাধিক পদযাত্রা রোড শো করেছেন তিনি। কোথাও ‘মোদী’ চা স্টল খোলার ব্যবস্থা করেছেন কোথাও আবার নাগরিকদের সঙ্গে আড্ডা বসিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, গত বুধবার শহরের একটি হলঘরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। সেখানে ছিলেন দলের কয়েকজন প্রার্থীও। গত লোকসভা ভোটেও একই কায়দায় শিলিগুড়িতে তিনি প্রচার চালিয়েছিলেন। তবে লোকসভা ভোটের মতো পুরভোটে ‘মোদী’ হাওয়া নেই বলে দলেরই কর্মী সমর্থকদের একাংশের দাবি। তাই দলের ক্ষোভ বিক্ষোভ মেটাতে কতটা সফল হলেন তিনি, কতটা সফল হল তাঁর সপ্তাহখানেকের প্রচার কৌশল, সব কিছুরই জবাব মিলবে পুরভোটের গণনার দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy