Advertisement
E-Paper

নিরপেক্ষ তদন্ত চায় দু’পক্ষই

  একটু অপেক্ষার পর ফের চলতে শুরু করে গৌতমের কনভয়। কালাগছ মোড়ে যখন গাড়ি পৌঁছয়, যোগ দেন এলাকার বিধায়ক হামিদুল রহমান। তার পরে গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে পরপর গাড়িগুলি যেতে শুরু করল মেয়েটির বাড়ির দিকে।

অভিজিৎ পাল ও  মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০৬:৪০
পাশে: মৃত কিশোরের ঘরে মৌসম। (বাঁ দিকে) কনভয় আটকনোয় প্রতিবাদে পথে নিশীথ প্রামাণিক, সুকান্ত মজুমদার ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

পাশে: মৃত কিশোরের ঘরে মৌসম। (বাঁ দিকে) কনভয় আটকনোয় প্রতিবাদে পথে নিশীথ প্রামাণিক, সুকান্ত মজুমদার ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

সোমবার সকাল থেকে কখনও নাগাড়ে, কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে চোপড়ায়। বেলা দুটো কুড়ি নাগাদ সোনাপুর পাম্পে পৌঁছন মন্ত্রী গৌতম দেব। জেলার নেতারা তখনও বলছেন, এখনও এলাকায় যাওয়ার পরিস্থিতি হয়নি।

এলাকা মানে মৃত মেয়েটির বাড়ি। সকালে মেয়েটির দেহ ইসলামপুর মর্গ থেকে নিয়ে পরিবারের লোকেরা যখন বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন, তাঁদের সঙ্গী হন বিজেপির তিন সাংসদ ও রাজ্য সহ-সভাপতি। পথ আটকায় পুলিশ। তাঁরা অবরোধে বসেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে তাঁরা ফিরে গিয়েছিলেন।

একটু অপেক্ষার পর ফের চলতে শুরু করে গৌতমের কনভয়। কালাগছ মোড়ে যখন গাড়ি পৌঁছয়, যোগ দেন এলাকার বিধায়ক হামিদুল রহমান। তার পরে গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে পরপর গাড়িগুলি যেতে শুরু করল মেয়েটির বাড়ির দিকে। বাড়ির সামনের তখন জটলা। গৌতম বাড়িতে পাতা ইটের উপর দিয়ে বারান্দায় এসে ওঠেন। মন্ত্রীকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন মেয়ের মা। একটু পরে মেয়ের শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফিরলেন বাবা। মন্ত্রীর সঙ্গে তখন কথা হচ্ছে মেয়ের জ্যেঠার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, সঠিক তদন্ত হয়ে দোষীরা শাস্তি পাক।’’ তিনি এবং মেয়ের মা দু’জনই জানান, তাঁরা বিজেপি কেন, কোনও দলের সঙ্গেই যুক্ত নন।

কিছু ক্ষণ পরে মন্ত্রী, বিধায়ক যান ভইসপিটা মোড়ে। সেখানে কিশোরের মৃত্যু ঘিরে এলাকার লোকেদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে যুবকদের বোঝান। এর পরই সোজা ছেলেটির বাড়ি। সঙ্গে তখন তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল, মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এবং সাংসদ মৌসমও। বারান্দায় বসে কেঁদে চলেছেন কিশোরের মা। উঠোনে বসেই কথা বলেন মন্ত্রীরা। কিশোরের মা ও দিদি মৌসমের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘ছেলেকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। খুন করা হয়েছে। আমরা চাই, সঠিক তদন্ত হোক।’’

এর আগে সকাল ১১টা নাগাদ ইসলামপুরে পৌঁছান বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, বালুরঘাটে সাংসদ সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এর এক ঘণ্টা পরে তাঁরা ইসলামপুর মর্গ থেকে কিশোরীর দেহ তার বাড়ির দিকে রওনা দেন। সেই সময়ে ইসলামপুর জাতীয় সড়কে মৃতদেহবাহী গাড়িটি ছেড়ে দিয়ে বিজেপি নেতাদের পথ আটকায় পুলিশ। এই নিয়ে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে পুলিশের বচসা শুরু হয়। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করেন রাজু, নিশীথরা। তাঁদের ফের বাধা দেয় পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশি আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে ইসলামপুর টাউন বিজেপি অফিসে বসে ফোনে বারবার খবর নেন তাঁরা, কিশোরীর শেষকৃত্য ঠিকভাবে সম্পন্ন হল কিনা। সন্ধ্যায় চোপড়া থানায় যান উত্তরবঙ্গের আইজি বিশাল গর্গ।

এর মধ্যে সোমবারের গোলমালের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে। এ দিন তাঁদের আদালতে পাঠানো হলে অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা আদালতের বিচারক মহুয়া রায় বসু তাঁদের ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় ভাওয়াল। তাঁদের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক অবরোধ, পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

পরপর দু’দিনে দু’টি মৃত্যুর পরে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপ তো চলছেই, তার সঙ্গে অন্য জায়গার পুরনো ছবি দিয়ে ঘটনাকে বিকৃত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ভু্য়ো পোস্ট হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয় হবে। পুলিশ মেয়েটির ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানিয়েছে, তার মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়, দেহে জখমের চিহ্ন নেই। তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরা প্রশ্ন তুলেছেন অন্য আরও বেশ কিছু নিয়ে। তার মধ্যে নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্তের দাবিও রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত সঠিক পথেই হচ্ছে। তবে বিজেপির দাবি, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

Rape Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy