উত্তরপ্রদেশে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে দুই দাদার। মারা গিয়েছেন খুড়তুতো দাদাও। বাড়িতে শোকগ্রস্ত এই পরিবেশের মধ্যেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেন মালদহের মানিকচকের এনায়েতপুরের বাসিন্দা ইউসুফ মোমিন। এনায়েতপুর ইএ হাইস্কুলের ছাত্র মোমিনের আসন পড়েছে মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুলে। বাড়িতে এত বড় দুর্ঘটনার জেরে শোকের আবহেও মোমিন যে শেষপর্যন্ত পরীক্ষায় বসতে পেরেছেন, তাতে খুশি তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউসুফেরা পাঁচ ভাই। উত্তরপ্রদেশের ভদোহীর কার্পেট কারখানায় বিস্ফোরণে মৃতদের মধ্যে ইউসুফের দুই দাদা গফ্ফর মোমিন ও সুভান মোমিন রয়েছেন। একই সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ইউসুফের খুড়তুতো দাদা ইসরাফিল মোমিনেরও। ওই এনায়েতপুর এলাকার আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রাম জুড়ে শশ্মানের নিস্তব্ধতা। কখনও কখনও কান্নার রোল ভেসে আসছে। এই পরিবেশে চার দিন ধরে বইয়ের পাতা ওল্টাতেই পারেননি ইউসুফ। নিয়ম মতো খাওয়াদাওয়াও হচ্ছে না। তার পরেও এ দিন মনের জোরেই বাংলা পরীক্ষা দিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রয়েছে ইংরেজি। বাংলা, ইংরেজির সঙ্গে শিক্ষাবিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভূগোল বিষয় রয়েছে তাঁর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউসুফ পড়াশোনায় ভালই। তাঁর ইচ্ছে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করা। কারণ, গ্রামের অধিকাংশ যুবকই কাজের সন্ধানে পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে।
তিনি বলেন, “আমাদের অভাব-অনটনের সংসার। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র আমি পড়াশোনা করছি। সংসারের হাল ফেরাতে আমার দুই দাদা গফ্ফর, সুভান উত্তরপ্রদেশে গিয়ে মারা গেলেন। বাকি দুই দাদা শ্রমিকের কাজ করেন। দাদা চায়, আমি পড়াশোনা করি। আমিও তাঁদের মতো শ্রমিকের কাজ করি, তা দাদারা চাইতেন না। তাই মন খারাপ থাকলেও পরীক্ষা দিতে এসেছি।’’
তার বাবা মজিদ আনসারি বলেন, “ভিন রাজ্যে পাঠিয়ে দুই ছেলেকে হারালাম। আর কোনও ছেলেকে হারাতে চাই না। আমি চাই ইউসুফ পড়াশোনা করে চাকরি করুক।” ইউসুফের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস সিংহ বলেন, “এনায়েতপুরের পুরো মহল্লা শোকাচ্ছন্ন। তার মধ্যেও ওই ছাত্র পরীক্ষা দিতে এসেছে। আমরা তাকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করছি। এমনকী, তার মনোবল বাড়ানোরও চেষ্টা করছি।”