বিধিভেঙে স্কুলবাস চলাচল নিয়ে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে শিলিগুড়িতে।
গত বৃহস্পতিবার তীব্র গতিতে চলতে থাকা একটি স্কুলবাস এক বাইক আরোহীকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাইক আরোহীর। বাইকে থাকা আর একজন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ট্র্যাফিক বিধির পরোয়ানা না করে স্কুলবাসের চলাচলে প্রশাসন রাশ টানতে না পারাতেই যুবকের প্রাণ গিয়েছে। অভিভাবক ফোরাম স্কুলবাসের বিধিভঙ্গ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সরব ছিল, এ দিন শুক্রবার একই অভিযোগ জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে শহরের একটি ব্যবসায়ী সংগঠনও।
গত বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডে একটি স্কুলবাসের ধাক্কায় মারা যান দীপঙ্কর বণিক (২৮) নামে এক যুবক। প্রতক্ষ্যদর্শীদের অভিযোগ, প্রায় ঝড়ের গতিতে আসা স্কুলবাসটি পেছন থেকে বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। বাইকটি বহু আগে থেকেই ডান দিকে ঘোরার জন্য আলো জ্বালিয়ে সঙ্কেত দিলেও, স্কুলবাসটি গতি কমায়নি বলে অভিযোগ। বাস চালক মদ্যপ ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। এক প্রতক্ষ্যদর্শীর অভিযোগ, ‘‘চালক সুস্থ না থাকলেই বিকেলের ভিড় রাস্তায় তীব্র গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুলবাসের ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন কিছুটা নমনীয় পদক্ষেপ করে থাকে। সে সুযোগ নিয়েই একের পর এক বিধিভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।
মৃতের পড়শিদের তরফে ক্ষতিপূরণের দাবিও তোলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গেলেও, সংশ্লিষ্ট বাস অথবা মালিক সংস্থার তরফে কোনও প্রতিনিধি সমবেদনা জানাতেও যাননি বলে অভিযোগ পরিবারের। মৃতের আত্মীয় রেণু বণিক এ দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘এখন কিছু স্কুলবাস বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। বাসের ধাক্কায় আরোহী ছিটকে পড়লে না থেকে তাঁকে পিষে দিয়ে চলে যাওয়া, তারপরেও কেউ সমবেদনা জানাতে না আসা। সব মিলিয়ে এ কেমন অমানবিক মুখ দেখছি আমরা?’’ স্কুলবাসের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে প্রশাসন যাতে কড়া পদভেপ করে তার দাবি জানিয়েছেন পরিবার। মৃতের পড়শিরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
এ দিন বিকেলে অবশ্য উত্তরবঙ্গের অভিভাবক ফোরামের সদস্যরা মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। ফোরামের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে থেকে স্কুলবাসের চলাচল নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছি। সে সমেই রাশ টানলে এই ঘটনা এড়ানো যেত। মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’ এ দিন বিকেলে নর্থ বেঙ্গল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি আরও চারটি দাবি রাখা হয়। দাবিগুলির মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুল বাসের গতি বেঁধে দেওয়া, স্কুলবাসের দরজায় নিরাপদ ও ভাল মানের তালার ব্যবস্থা করা, প্রশিক্ষিত পরিচারক রাখা, পাঁচ বছর বা তার বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চালক নিয়োগ ও গাড়ি চালানোর জন্য কোনওভাবে মামলা থাকা চালককে স্কুলবাস চালানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি তোলা হয়েছে।
সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রুয়াল বলেন, ‘‘আমরা জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, আরটিও সকলের সঙ্গে কথা বলব। এদিন আমাদের দাবি সনদ জমা দিয়েছি। স্কুলবাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এবার বন্ধ হওয়ার সময় এসেছে।’’ ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিমার টাকা যাতে মৃতের পরিবার পায় তার ব্যপারে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে বলে দাবি করা হয়েছে। বাস মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্ত বাস মালিকদেরই বিমা করানো থাকে। ওই পরিবার যাতে সম্পূর্ণ বিমার সুবিধা পায়, সেটা দেখা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সাহায্য করব।’’
এ দিন মহকুমাশাসক ওই সময়ে উপস্থিত না থাকায়, তাঁর বদলে ম্যাজিস্ট্রেট সুবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, এদিন সকালে বাসচালককে বর্ধমান রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে চালকের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘অভিযোগ অনুযায়ী মামলা হয়েছে। নতুন করে কোনও অভিযোগ দায়ের হলে তা খতিয়ে দেখে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy