Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে ‘ফেরত চুক্তি’

টাকা ভাঙিয়ে দেওয়া নিয়ে ছোটখাট লেনদেন ইতিউতি যে হবে তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ নেই। কোথাও চটজলদি ৫০০ টাকা ভাঙানোর জন্য ৫০ টাকা গচ্চা দিতেও রাজি হচ্ছেন অনেকে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

টাকা ভাঙিয়ে দেওয়া নিয়ে ছোটখাট লেনদেন ইতিউতি যে হবে তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ নেই। কোথাও চটজলদি ৫০০ টাকা ভাঙানোর জন্য ৫০ টাকা গচ্চা দিতেও রাজি হচ্ছেন অনেকে। কোথাও ১০০ টাকার নোট পিছু ১০ টাকা কমিশনও আদায় করছেন কেউ কেউ। বুধবার দিনের শেষে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে সেবক রোড, খালপাড়ার কয়েকজন ব্যবসায়ীর রাতারাতি ফেঁদে বসা কারবার। অভিযোগ, কয়েকজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী বিপুল অঙ্কের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট জমা নিয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কেটে তা ৫-৬ মাসের মধ্যেই নতুন নোটের মাধ্যমে তা ফিরিয়ে দেওয়ার ‘চুক্তি’ করে চলেছেন। পুলিশ-প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রের অভিযোগ অনুযায়ী, যাঁরা এই ‘চুক্তি’ করছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন।

তবে লিখিত কিছু নেই। সবটাই মুখে মুখে। কারণ হিসেবে শিলিগুড়ির একাধিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী একান্তে জানিয়েছেন, কালো টাকাকে সাদা হিসেবে ফিরিয়ে দেওয়ার চুক্তি কি কখনও লিখিত হতে পারে? সবটাই বিশ্বাসের উপরে চলে বলে তাঁরা দাবি করেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটে অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও অভিযোগ পৌঁছয়নি।

তবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা সাদা পোষাকের পুলিশ অফিসারদের শহরে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন। সিপি বলেন, ‘‘অনেক কিছুই শুনছি। টাকার বেআইনি লেনদেন বরদাস্ত করা যাবে না। সাদা পোষাকের পুলিশকে নানা জায়গায় মোতায়েন করা হচ্ছে।’’

কালো টাকার দুনিয়ায় যাঁদের অনায়াস যাতায়াত, তাঁদের একাংশ জানান, ১-২ লক্ষ টাকার পুরানো নোট থেকে নতুন নোটের কারবার ছোট পর্যায়ে হচ্ছে। কারণ, তাঁদের যুক্তি, ৪৯ হাজার টাকা করে চার পাঁচ জন কর্মীকে দিয়ে জমা করালেই সেটা নতুন হতে অসুবিধে নেই। খালাপড়া, সেবক রোডে লেনদেনের মাত্রা হচ্ছে ২ লক্ষ টাকার বেশি। কেন্দ্র-রাজ্যের একাধিক অফিসারও ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে সূত্রের খবর।

সেটা কীরকম? কয়েকজন ব্যবসায়ী দাবি, এক অফিসার তাঁর কাছে থাকা ১৬ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ শোনা গিয়েছে। এটাও তাঁরা শুনেছেন, ৬ মাসের মধ্যে ওই অফিসারকে ২০ শতাংশ টাকা কেটে বাকিটা নতুন নোটের মাধ্যমে দেওয়ার শর্ত হয়েছে। সে ভাবেই কেউ ২০ লক্ষ, কারও ৫০ লক্ষ, কেউ আবার ৫০ লক্ষ টাকাও পাঠানোর চুক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ভাসছে শিলিগুড়ির বাতাসে। কিন্তু, কেন ২০ শতাংশ টাকা দেওয়ার শর্ত মেনে নেওয়া হচ্ছে? নানা সূত্রের খবর, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মাসিক বন্দোবস্তের ভিত্তিতে নানা ব্যবসা চলে। সে অনুযায়ী, অফিসারদের একাংশের কাছে ফি মাসে মোটা টাকা পৌঁছে যায়। সেই টাকা জমতে জমতে বিপুল পরিমাণ হয়ে ওঠে। সাধারণত, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটেই সে সব টাকা বাড়িতে, শ্বশুরবাড়িতে কিংবা অফিসের গোপন আলমারিতে রাখাই দস্তুর। আচমকা সে সব নোট বাতিল হওয়ায় রাতারাতি তা ফেরাতে গেলে বাঁধা মাইনের চাকুরেরা চরম বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গোটা টাকাই ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই তাঁদের। তাই ঝুঁকি হলেও তা মৌখিক চুক্তিতে কাউকে দিয়ে যদি সিংহভাগ ফেরতের সম্ভাবনাকেও আঁকড়ে ধরতে চান অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Businessmen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE