Advertisement
E-Paper

ICSE: ক্যানসার ভুলে তারার মতো উজ্জ্বল ধ্রুব

শরীরের নিচের অংশ পা থেকে ক্রমে গলা পর্যন্ত অসাড় হয়ে পড়ে। নড়াচড়া ও কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১ ০৭:৩২
নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

রক্তে লিম্ফোমায় টি সেলে ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই লড়াইটা শুরু হয়েছিল বছর চারেক আগে। চিকিৎসক এক সময় বলেও দিয়েছিলেন, হয়তো কয়েক মাস বাঁচবে। সেই থেকে বিরল ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শুরু। চিকিৎসা শুরুর আগে শরীর এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে সাত দিন ভেন্টিলেশনে থাকতে হয়। প্রথম দফায় তিন মাস কেমোথেরাপি চলে। তখন টানা হাসপাতালে। কেমোর পর সাত দিনের রেডিয়েশন। এক মাস কাটতে না কাটতেই ‘গুলেন বারি সিনড্রোম’ নাম স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। শরীরের নিচের অংশ পা থেকে ক্রমে গলা পর্যন্ত অসাড় হয়ে পড়ে। নড়াচড়া ও কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। হাত নড়াতে পারতেন না। জল খেতেও অসুবিধা হত। ক্যানসারের সঙ্গে এ বার স্নায়ুর চিকিৎসাও চলতে থাকে। তা থেকে কিছুটা সুস্থ হতেই আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষায় বসেছিল দেবজিৎ ঘোষ। তার পর ৯৫.৮ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে সে। চিকিৎসার সঙ্গে পড়াশোনাও চলতে থাকে। স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ‘ওরাল কেমো’ চলেছে গত বছর মার্চ পর্যন্ত। তার মধ্যে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছেন। এ বছর মার্চে কলকাতায় টাটা মেমোরিয়ালে চেকআপ করিয়ে আসার পর প্রি-বোর্ড পরীক্ষায় বসেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়নি। দিনকয়েক আগে ফল ঘোষণা হলে দেখা যায়, শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা দেবজিৎ ওরফে ধ্রব ৯৮.৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন।

শিলিগুড়ির বাসিন্দা হলেও দেবজিৎ পড়াশোনা করেছেন জলপাইগুড়ির হোলি চাইল্ড স্কুল থেকে। স্কুল করতে না পারলেও ক্লাসে বরাবর প্রথম দেবজিৎকে তাই শিক্ষকেরা দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দেন। তখন কলকাতায় টাটা মেমোরিয়ালে মারণ রোগের সঙ্গে লড়ছিলেন দেবজিৎ।

তাঁর সহপাঠী শীর্ষেন্দু শীল মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ভেন্টিলেশনে থেকে লড়াই চালানোর পর তিনি এ বছর আইএসসি’তে ৯৯ শতাংশ নম্বর পান। দেবজিতের লড়াইটাও যেন তাঁর মতো এক সুতোয় বাঁধা।

দেবজিতের মা অঞ্জনা গৃহবধূ। বাবা জয়ন্ত ঘোষ স্কুল শিক্ষক। তিনি জানান, তিন মাস কেমো এবং রেডিয়েশনের পর চিকিৎসক বলে দিয়েছিলেন, হয়তো কয়েক মাস বাঁচতে পারবে। তার পর স্নায়ুর অসুখ শুরু হতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কলকাতায় টাটা মেমোরিয়ালে ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসার পর তাঁরা ফিজিওথেরাপি করাতে বলেন। শিলিগুড়ি ফিরে আসেন। শিলিগুড়ি হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিস্ট বিকাশরঞ্জন ঢালি বিপদে পাশে দাঁড়ান। তখনও পড়তে পারতেন না দেবজিৎ। বাড়িতে স্কুলের শিক্ষকেরা বই পড়ে বোঝাতেন। শুনে পড়া মনে রাখতে হত।

একাদশে ওঠার পর ফের একটু একটু করে পড়াশোনা শুরু করতে পারেন। স্কুলে বেশিরভাগ সময়ই যেতে পারতেন না। শারীরিক অবস্থা দেখে কাউন্সিল তাতে সম্মতি দিয়েছিল। একাদশের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে ২০২০ সালের মার্চে কলকাতায় চেকআপ করাতে গেলে চিকিসক জানান, আগের রোগের উপসর্গগুলো আর নেই। তবে নিয়মিত চেকআপে থাকতে হবে।

দেবজিৎ বলেন, ‘‘জেনেটিক্স নিয়ে বা রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে চাই। দাবা খেলতে ভাল লাগে। জীবনেও জিততে চাই।’’

cancer ICSE
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy