Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লোক ধরে এনে ভোট, এ বার বিতর্কে জলিল

পুরসভা নির্বাচনের মুখে শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য ঘিরে কোচবিহারে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পর এ বার কর্মীদের বুথে বুথে পাহারা দেওয়ার কাজে নামতে বলার পাশাপাশি ভোট দিতে ‘লোক ধরে আনার’ পরামর্শ দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন দলের জেলা সহ সভাপতি আবদুল জলিল আহমেদ। বৃহস্পতিবার কোচবিহার শহরের গোয়ালাপট্টি এলাকায় আয়োজিত কর্মিসভায় প্রকাশ্যে সে কথা বলেন তিনি।

কর্মিসভায় জলিল আহমেদ। —নিজস্ব চিত্র।

কর্মিসভায় জলিল আহমেদ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৬
Share: Save:

পুরসভা নির্বাচনের মুখে শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য ঘিরে কোচবিহারে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পর এ বার কর্মীদের বুথে বুথে পাহারা দেওয়ার কাজে নামতে বলার পাশাপাশি ভোট দিতে ‘লোক ধরে আনার’ পরামর্শ দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন দলের জেলা সহ সভাপতি আবদুল জলিল আহমেদ। বৃহস্পতিবার কোচবিহার শহরের গোয়ালাপট্টি এলাকায় আয়োজিত কর্মিসভায় প্রকাশ্যে সে কথা বলেন তিনি।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে জলিল আহমেদ বলেন, “বেশি কথা বলে লাভ নেই। ভাল কথা বললেও সাংবাদিকেরা খারাপ লেখেন। কিন্তু বাস্তব কথাটা বলতে হবে। প্রতি দিন বুথে বুথে পাহারা দিতে হবে। এত দিন ওরা (বামফ্রন্ট) আমাদের ঢুকতে দেয়নি। পাহারা দিয়েছে। নির্বাচনের আগের দিন সকাল পর্যন্ত পাহারা দিতে হবে। লোককে ধরে এনে ভোট দিতে হবে।”

বিরোধীদের অভিযোগ, প্রচার পেতেই শাসকদলের নেতাদের মধ্যে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল নেতারা অবাধ ভোটের বাতাবরণ নষ্ট করে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছেন। ঘটনার পর সিপিএম জলিল আহমেদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “প্রকৃত ভোটারদের ধরে আনলে ক্ষতি নেই, তবে ওঁরা ভুয়ো ভোটারদের যেন ধরে না আনেন। বাম আমলে সন্ত্রাস হলে, যিনি ওই বক্তব্য রেখেছেন তাঁর স্ত্রী গত পুরভোটে তৃণমূলের টিকিটে জিতলেন কি করে?”

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য ছাপিয়ে যেতে ওই মন্তব্য করা হয়েছে। ওই বক্তব্য করে থাকলে তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত। কমিশনে অভিযোগ জানাব।” বিজেপির জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “এ সব আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা। বক্তব্যের তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে অভিযোগ জানানো হবে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। শহরের ভোটাররা সচেতন। তাই আতঙ্ক ছড়ানোর কথা বলে লাভ হবে না, আমরাও মোকাবিলা করব।” রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য ঘিরে বিতর্কের রেশ মিটতে না মিটতে ফের এই বক্তব্য ঘিরে রীতি মতো অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। ওই কর্মিসভায় রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী জ্যোতির্ময় কর, বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি ওই বক্তব্য রাখেন। অস্বস্তি এড়াতে তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করেন, “ও রকম কোনও কথা আমি শুনিনি।” রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ও রকম কোনও মন্তব্য খেয়াল করিনি।” কর্মিসভার প্রধান বক্তা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী জ্যোতির্ময় কর অবশ্য জলিল আহমেদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। জ্যোতির্ময়বাবু সাফাইয়ের সুরে বলেন, “আমি মন দিয়ে ওঁর বক্তব্য শুনেছি। কর্মীরা তো ভোটের সময় ঘুমিয়ে থাকবেন না। তাঁদের কাজ ভোটারদের ভোট দিতে অনুরোধ করা। ভোটারদের উদ্বুব্ধ করার ভাবনা থেকেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। এখানে সন্ত্রাস , আতঙ্ক নেই।” বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমবায় মন্ত্রীও সকাল সকাল ভোটদানের ওপর জোর দেন।

পরিস্থিতির জেরে সুর পাল্টে নিজের বক্তব্যের ব্যাখা দিয়েছেন আবদুল জলিল আহমেদ। তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি বলেন, “আমি কোন সন্ত্রাস, আতঙ্কের কথা বলিনি। অসুস্থ ভোটারদের ধরে এনে ভোট কেন্দ্রে যেতে সাহায্য করার কথা বলেছি। বামফ্রন্ট আমলে মানুষ ভোট দিতে পারতেন না। পাহারা দিয়ে সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়া হত। এ বারে তাঁরা যাতে বাধা দিতে না পারেন, সে প্রসঙ্গেই নজর রাখার কথা বলতে হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE