Advertisement
E-Paper

চোখের জলে স্মৃতির খোঁজ

জলপাইগুড়ি হোক অথবা শিলিগুড়ি, দমকলের ইঞ্জিন এসে পৌঁছতে ঢের সময় লাগে। ততক্ষণে যে তাদের গ্রামের মন্দিরটি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আশঙ্কা করেছিল শ্রীমন্ত ওঁরাও। বছর ছাব্বিশের যুবক শ্রীমন্ত লাগোয়া একটি চা বাগানের বাসিন্দা। মন্দিরের মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর ছেলেবেলার বহু স্মৃতি।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
 চোখ খুঁজছে পুরনো মন্দির। ছবি: সন্দীপ পাল

চোখ খুঁজছে পুরনো মন্দির। ছবি: সন্দীপ পাল

বিকেলের ফুরসতে কখনও লুকোচুরি খেলা, কখনও গল্পের ঝাঁপি খুলে বসা। যে যাই করুক, গন্তব্য কিন্তু সেই দেবী চৌধুরাণীর মন্দির। মাঠগুলি ছেলেদের দখলে। তাই এলাকার কিশোরী বা তরুণীদের বড়ই প্রিয় এই মন্দির চত্বর। তাই শুক্রবার রাতে সেই মন্দির জ্বলতে দেখে সরে থাকতে পারেনি তারা। বইখাতা ফেলে হাঁড়ি-কলসি-বালতিতে জল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে যার মতো। মূল কাঠের মন্দির ছাই হয়ে গেলে দু’পাশের দু’টি কাঠামো বেঁচে গিয়েছে শুধু ওদের জন্য।

আগুন নেভাতে গিয়ে কারও পায়ে পেরেক ফুটেছে। কারও পায়ে আঘাত লেগেছে কাচ বা টিনের। আগুনের হলকায় চামড়া পুড়ে গিয়েছে কারও। তবুও হাল ছাড়েনি। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা তো বটেই, এলাকার অনেকেই যে ভাবে সম্প্রীতির এই নজিরকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তা দৃষ্টান্তমূলক।’’

জলপাইগুড়ি হোক অথবা শিলিগুড়ি, দমকলের ইঞ্জিন এসে পৌঁছতে ঢের সময় লাগে। ততক্ষণে যে তাদের গ্রামের মন্দিরটি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আশঙ্কা করেছিল শ্রীমন্ত ওঁরাও। বছর ছাব্বিশের যুবক শ্রীমন্ত লাগোয়া একটি চা বাগানের বাসিন্দা। মন্দিরের মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর ছেলেবেলার বহু স্মৃতি। তাই কখনও টিনের বালতিতে জল ভরে, কখনও বা বালি ভরে ছিটিয়ে দিতে শুরু করেছিল মন্দিরে। মাঝে মধ্যে আগুনের হলকায় দৌড়ে সরেও আসতে হয়েছে। তেমনিই একসময়ে পড়ে গিয়ে পা কেটে যায় শ্রীমন্তের। রক্ত গড়াতে থাকে হাঁটুর নীচ থেকে।

শনিবার সকালেও তিনি ছিলেন মন্দির চত্বরে। সামনে ছাই, কাঠের বাটামের কালো অংশ। শ্রীমন্ত বললেন, ‘‘শুধু আমি কেন, আমার মতো অনেকেই আগুন নেভাতে চেয়েছিল। যদি মন্দিরটা বাঁচানো যেত।’’ জলের বালতি হাতে রাতে বারবার ছোটাছুটি করেছেন। ডান হাতের শিরা ফুলে রয়েছে এখনও।

লুকোচুরি খেলার সময় কতবার যে মন্দিরের পেছনে গিয়ে লুকিয়েছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী দীপা তা মনে করা অসম্ভব। মন খারাপ হলে মন্দির চত্বরে এসে বসে থাকত দীপার দিদি নবম শ্রেণির ছাত্রী দীপালি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বই নিয়ে পড়তে বসেছিল দু’জনেই। বাইরে চেঁচামেচি শুনে ছুটে চলে যায় মন্দিরের মাঠে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে তখন। আগুন নেভাতে দৌড়ে সেখানে ঢুকে পড়তে চেয়েছিল দীপা। আটকে দেন বাসিন্দারা। ততক্ষণে দিদি দীপালি বালতিতে জল নিয়ে এসেছে।

গরমের দুপুরে মন্দিরের দাওয়ায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ত দিপালী। সেই দাওয়া নেই। বসন্তের বাতাসে উড়ছে মন্দিরের পোড়া ছাই। জলে ভরেছে দীপালির চোখ।

Devi Chaudhurani Temple fire fire accident Jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy