Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘নিধিরাম’ বন দফতর, গন্ডার-খুনে তদন্তে সিআইডি

বন দফতরের একটি অংশের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে এই সব এলাকায় গন্ডার খুন ও খড়্গ কেটে পাচারের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। এর পিছনে আন্তর্জাতিক চোরাচালানচক্র কাজ করছে বলে বনকর্তাদের সন্দেহ।

চক্র: ভুটান সীমান্ত লাগোয়া বনাঞ্চল জুড়েই চোরাশিকার চলছে বলে অভিযোগ। গ্রাফিক: জিয়া হক

চক্র: ভুটান সীমান্ত লাগোয়া বনাঞ্চল জুড়েই চোরাশিকার চলছে বলে অভিযোগ। গ্রাফিক: জিয়া হক

নারায়ণ দে ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৪৪
Share: Save:

জলদাপাড়ায় গন্ডার খুনের কিনারা করতে সিআইডি-র সাহায্য চাইল বন দফতর। শনিবার এ কথা জানান রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিনহা। তবে একই সঙ্গে বন দফতরের কর্তাদের সন্দেহ, খড়্গটি অন্যত্র পাচার হয়ে গিয়েছে। বন দফতর একই সঙ্গে জানিয়েছে, চোরাশিকারিদের সঙ্গে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত হাতিয়ারও তাদের নেই। বছর পাঁচেক আগে বনরক্ষী এবং উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল তারা। কিন্তু সেই ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। ফলে চোরাশিকারিদের বিরুদ্ধে তাঁরা এখনও কার্যত সেই ‘নিধিরাম সর্দার’ই।

বন দফতরের একটি অংশের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে এই সব এলাকায় গন্ডার খুন ও খড়্গ কেটে পাচারের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। এর পিছনে আন্তর্জাতিক চোরাচালানচক্র কাজ করছে বলে বনকর্তাদের সন্দেহ। কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে দফতর সূত্রে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই পুরো ঘটনার সঙ্গে অসম থেকে আগত দুষ্কৃতীরা রয়েছে। তারা আবার ঠাঁই পেয়েছিল স্থানীয় বনবস্তিতে। পালানোর সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা ভুটানে ঢুকে পড়ে। পুরো চক্রটিকে ধরতে গেলে সিআইডি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর সাহায্য দরকার। বনকর্তাদের একাংশের দাবি, শেষোক্ত সংস্থাটি বিষয়টি দেখছে। যদিও বন দফতরের অন্য একটি সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থাটিকে আপাতত তদন্তের ব্যাপারে দূরে রাখারই চেষ্টা চলছে।

কোথায় এবং কেন গন্ডারের খড়্গের চাহিদা? রবিকান্ত জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গন্ডারের খড়গের চাহিদা রয়েছে ওষুধ তৈরির জন্য। তা ছাড়া অনেকে অন্ধ বিশ্বাসের জন্য গন্ডারের খড়্গ ব্যবহার করেন। রবিকান্ত বলেন, “আর্ন্তজাতিক চোরাচালনকারীরা বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্যের বাইরে, এমনকি দেশের বাইরে কোনও কোনও শহর থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গন্ডারের খড়্গ পাচার করা হয়। নেপাল, মণিপুর, মায়ানমার-সহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে গন্ডারের খড়্গ বিদেশে চলে যায়।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্তা জানান, গন্ডার হত্যার তদন্ত করতে তাঁদের একটি বিশেষ দল জলদাপাড়া জঙ্গলে পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে সিআইডি আধিকারিকরা বন দফতরের কর্তাদের তদন্তে সাহায্য করবেন।

এর মধ্যেই পুরনো দাবি ফিরিয়ে বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, এত বছর ধরে বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁদের হাতে অস্ত্র নেই। এই নিধিরাম সর্দার অবস্থায় চোরাশিকারিদের মোকাবিলা করা কঠিন। কারণ, তাদের কাছে অনেক সময়েই অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকে। জলদাপাড়ার গন্ডার খুনের ঘটনায় বিষয়টি আবার সামনে চলে এল, বলছেন তাঁরা। বন দফতরের একাধিক শীর্ষকর্তা জানাচ্ছেন, একদা রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের একটি ব্যাটেলিয়নকে বন দফতরের কাজে পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন বনাঞ্চলে সেই ক্যাম্প থাকত। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই কর্মীসংখ্যাও কমেছে।

গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গে একের পর এক গন্ডার খুন হয়েছে। প্রতিবারই গন্ডারের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত গরুমারা ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে এসেছে। এ বারেও সেই নিরাপত্তার ঘাটতির কথাই বলছেন বন দফতরের অনেকে। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র এমনকি এ-ও বলছে, অসমের কাজিরাঙার ওরাংয়ে সশস্ত্র রক্ষী বাড়িয়েই চোরাশিকারিদের দাপট কমানো হয়েছে। ওই রাজ্যের বনাঞ্চলে রক্ষীদের সঙ্গে একাধিকবার গুলির লড়াইও হয়েছে শিকারিদের। অসমে তাড়া খেয়ে তবেই পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলে শিকারে ঢুকছে ওই দুষ্কৃতীরা। ওই সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, জলদাপাড়ার গন্ডারটিকে সম্ভবত মণিপুর ও মিজোরামের শিকারিরা মেরেছে। তড়িঘড়ি করে কেটে নেওয়া খড়্গটিকে ভুটান দিয়ে পাচার করা হতে পারে বলেও সন্দেহ তদন্তকারীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CID Jaldapara National Park Investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE